টানা ভারী বর্ষণে ফুলে ওঠা কুশিয়ারা নদীর পানি নবীগঞ্জে কুশিয়ারা ডাইকে নতুন করে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি করেছে। গত সাত দিনে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। শতাধিক একর ফসলি জমি হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এমনকি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ও নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো নবীগঞ্জের দীঘলবাঁক, আউশকান্দি ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন। নদীর অপর পাড়ে জগন্নাথপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নেও একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। অন্তত ১০টি পরিবার বর্তমানে রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
দীঘলবাঁক ইউপির সাবেক মেম্বার ফরিদ মিয়া জানান, বর্ষায় ভাঙন দেখা দিলেও এবার ঘূর্ণিস্রোতের আঘাতে মাত্র একদিনেই আধা কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে শতাধিক বাসিন্দার বাড়িঘর ও জমি হারিয়ে গেছে।
দীঘলবাঁক গ্রামের শাহ ইউসুফ আলী বলেন, “ভাঙন এত দ্রুত হয়েছে যে কিছু সরানোর সুযোগও পাওয়া যায়নি। অর্ধ লক্ষাধিক টাকার গাছের বাগান চোখের সামনে নদীতে চলে গেছে।”
রফিক আলী নামে এক বাসিন্দা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে অন্তত ১৫টি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫৪ বছরে নবীগঞ্জের ২৫টি গ্রামের হাজারো বাড়িঘর নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে। স্থানীয়দের শঙ্কা, আরও দুই-চার দিন এ ভাঙন চলতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর অস্তিত্বই মুছে যাবে।
জামারগাঁও গ্রামের রইছ আলী এবারের ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুলশিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন জানান, “পৈতৃক বাড়িঘর নদীতে চলে যাচ্ছে, এখন শ্রীমঙ্গলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে।”
স্থানীয় ইউপি মেম্বার আকুল মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহে ২৫-৩০টি গ্রামের বহু বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এবারের ভাঙন এত আকস্মিক ছিল যে বাসিন্দারা প্রস্তুতির সুযোগই পাননি।
দীঘলবাঁক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুল বারিক রনি বলেন, “নদীভাঙন নতুন সমস্যা নয়, কিন্তু এবারের ভাঙনে সবাই দিশেহারা।”
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী সহকারী প্রকৌশলী শামীম মাহমুদ হোসাইন জানান, কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তবে নদীর পানি বেশি থাকায় বর্তমানে মেরামত সম্ভব নয়; পানি কমলেই কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন:








