শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৫ পৌষ, ১৪৩২

মানবপাচারের মিথ্যা মামলায় হয়রানি, আতঙ্কে সুন্দরগঞ্জের কয়েকটি পরিবার

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট, ২০২৫ ১২:৩৬

শেয়ার

মানবপাচারের মিথ্যা মামলায় হয়রানি, আতঙ্কে সুন্দরগঞ্জের কয়েকটি পরিবার
ছবি সংগৃহীত

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মানবপাচারের মিথ্যা মামলার ফাঁদে ফেলে হয়রানির শিকার হয়েছেন সৌদি প্রবাসীর পরিবার, পল্লী চিকিৎসক ও জনপ্রতিনিধিসহ একাধিক ব্যক্তি। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব মামলা দায়ের করায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের সুবর্ণদহ গ্রামের আলমগীর মণ্ডল প্রায় ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন সৌদি আরবে। দুই বছর আগে তাঁর সহযোগিতায় একই গ্রামের জিয়াউর রহমান, জামিউল ইসলাম, কবির উদ্দিন ও আল আমীন নামে চারজন সৌদি আরবে যান। প্রথমে একটি কোম্পানিতে চাকরি পেলেও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাদের চাকরি চলে যায়। এরপর থেকেই মানবপাচারের অভিযোগে আলমগীরের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের শুরু হয়।

এসব মামলার মাধ্যমে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ইতালি প্রবাসী শরীয়তপুরের সুমন ব্যাপারী, সুন্দরগঞ্জের শান্তিরাম ইউনিয়নের পরান গ্রামের সৌদি প্রবাসী আনজু মিয়া এবং দহবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুমাইটারি গ্রামের মিঠু মিয়া (ওরফে ফিটু)-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা প্রথমে মামলার ভয় দেখিয়ে এবং পরে মামলা মীমাংসার প্রলোভন দিয়ে টাকা আদায় করতেন। অডিও রেকর্ডে প্রতারকদের হুমকি ও ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

ভুক্তভোগী আলমগীর মণ্ডলের স্ত্রী মৌসুমি বেগম, বাবা মুসলিম আলী, শ্বশুর মঞ্জু মিয়া ও শ্যালক মামুন মিয়ার অভিযোগ—গত এক বছরে চক্রটি পরিচিতদের দিয়ে মানবপাচারের অভিযোগে সুন্দরগঞ্জ ছাড়াও চাঁদপুর, টাঙ্গাইল, সাভার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত ৫-৬টি মামলা করেছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী রোজিনা বেগম বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। স্থানীয় চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে মামলাটি আপস-মীমাংসা হলেও আট মাস পর আবারও নতুন মামলা করা হয়।

এই মামলাগুলোর একটিতে গ্রেপ্তার হয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে জেলে থাকতে হয়েছে মৌসুমি বেগমকে। অনেকে এখনো পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছাড়া। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। মামলার আপস হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রোজিনা বেগমও।

শুধু আলমগীরের পরিবার নয়, একই কৌশলে হয়রানির শিকার হয়েছেন পরান গ্রামের পল্লী চিকিৎসক নুরুন্নবী সরকার, রামজীবন ইউনিয়নের দক্ষিণ বেকাটারি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া এবং রেজাউল করীম নামে এক কলেজ শিক্ষক। তারা দাবি করেছেন, মামলার বাদী বা সাক্ষীদের তারা চেনেন না, এমনকি কোনো প্রবাসীর সঙ্গেও তাদের পরিচয় নেই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, চক্রটি পারিবারিক দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়েও মিথ্যা মামলা দিয়ে পরে আপসের নাটক সাজিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা দ্রুত এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গিয়ে অভিযুক্ত মিঠু মিয়াকে পাওয়া যায়নি। ফোনেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। প্রবাসী সুমন ব্যাপারী ও আনজু মিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।

মানবপাচার সংক্রান্ত হয়রানিমূলক মামলা বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শরিফুল আলম বলেন, “মানবপাচার অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। এমন মামলাকে পুঁজি করে যেন কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।”



banner close
banner close