বান্দরবানের লামা উপজেলায় মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রাম ভয়াবহ নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে। চলতি বর্ষায় ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করায় অর্ধশতাধিক বসতঘর, শত শত একর ফসলি জমি এবং গ্রামের একমাত্র কবরস্থান বিলীন হওয়ার মুখে। ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা।
লামা সদর ইউনিয়নের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম ঘেঁষে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদী দীর্ঘদিন ধরেই গ্রাস করে নিচ্ছে বসতভিটা ও কৃষিজমি। ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ১৯২৮ সালে গড়ে ওঠা ‘নামার পাড়া’ একসময় ৫০০ পরিবারের আবাসস্থল ছিল। কিন্তু গত ২৭ বছরে অব্যাহত ভাঙনে পাড়াটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও প্রায় ২০০ একর জমি নদীতে হারিয়ে গেছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে নামার পাড়ার মতোই বিলীন হয়ে যাবে মেরাখোলা গ্রামও। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় ব্লক বসিয়ে ভাঙন রোধের দাবি জানিয়েছেন।
১৯৮৭ সালের বন্যায় প্রথম বড় ধরনের ভাঙন দেখা দেয় নামার পাড়ায়। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে ভাঙন তীব্র হয়। এখন পর্যন্ত একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, তিনটি সড়ক, ৫০০ ঘরবাড়ি ও শত শত একর জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ইউনিয়নের একমাত্র কবরস্থানের অধিকাংশও নদীতে হারিয়েছে। অনেক পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেরাখোলার দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার এলাকা প্রতিদিন ভেঙে পড়ছে নদীতে। ইতিমধ্যে বহু গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে, ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহেই কয়েক একর জমি বিলীন হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক সোলেমানসহ বহু পরিবার। স্থানীয় ইব্রাহিম জানান, তিনি আটবার নদীগর্ভে বসতভিটা হারিয়েছেন, কিন্তু কোনো সহায়তা পাননি।
লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তার কামাল জানান, মেরাখোলা ও বৈল্লারচরের ৫০০ পরিবার ইতিমধ্যে গৃহহীন হয়েছে। ব্যবস্থা না নিলে পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, শুধু নামার পাড়াতেই ৫০০ পরিবার, মসজিদ, মাদ্রাসা, সড়ক ও ২০০ একর জমি হারিয়েছে। এতে বাসিন্দারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।
লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন জানান, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী জানান, মেরাখোলা গ্রাম রক্ষায় প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন:








