শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৫ পৌষ, ১৪৩২

মিরসরাইয়ে গ্রামীণ সড়কে বেহাল দশা, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট, ২০২৫ ১১:৩৫

শেয়ার

মিরসরাইয়ে গ্রামীণ সড়কে বেহাল দশা, দুর্ভোগে লাখো মানুষ
ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোর দীর্ঘদিনের অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বছরের পর বছর খানা-খন্দে ভরে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সড়কে প্রতিদিন চলতে হচ্ছে রিকশা, সিএনজি, পিকআপ, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানান যানবাহন। কোথাও কোথাও বর্ষা মৌসুমে হাঁটাও হয়ে পড়ে দুঃসাধ্য।

সারেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরদীঘি থেকে ছত্ত্বরভূঞার হাট সড়কের দুর্গাপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার অস্তিত্বই নেই। কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট, কোথাও জমে আছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। যানবাহন চালকদের প্রতিনিয়ত নিতে হচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

নিজামপুর থেকে সাহেরখালী ভোর বাজার পর্যন্ত ডিসি ওবায়দুল্লাহ সড়কেও রয়েছে একই দুরবস্থা। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মজীবী মানুষ এই সড়কে চলাচল করেন। পদুয়া থেকে মনিরহাট পর্যন্ত অংশে সড়কের গর্তে পড়ে যানবাহন প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক হামিদা আবেদিন পলি বলেন, “নিজামপুর থেকে ভোর বাজার পর্যন্ত এই সড়কে চলাচল করা দিনকে দিন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।”

এদিকে, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বড়দারোগাহাট-বগাচতর বেড়িবাঁধ সড়কের অবস্থা আরও করুণ। একসময় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডের ছয়টি ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করলেও বর্তমানে পথটি প্রায় পরিত্যক্ত। স্থানীয়রা বিকল্প পথে ঘুরে যাতায়াত করছেন।

হাইতকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ছালাহ উদ্দিন বলেন, “গত তিন-চার বছর ধরে এই সড়কের বেহাল দশা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।”

একইভাবে করুণ চিত্র পাওয়া গেছে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়কেও। প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে ইছামতি মন্দির পর্যন্ত সামান্য অংশ ভালো থাকলেও বিষুমিয়ারহাট থেকে আজমপুর বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কে চলা যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ পাড়ি দেওয়ার শামিল।

সিএনজি চালক শরীফ হোসেন বলেন, “প্রতিদিন গাড়ি চালাই, কিন্তু মনে হয় যেন জীবনের সঙ্গে লড়াই করে এগোচ্ছি। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে।”

ওচমানপুরের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, “রাস্তার কাজ হলেও নিম্নমানের হওয়ায় কিছুদিন পরই আবার ভেঙে যায়। এতে সময় ও খরচ—দুটিই বাড়ছে।”

এই সড়কগুলোর দুরবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। মো. আনোয়ার হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, “রাস্তায় সমস্যার কারণে আমার ছেলে প্রায়ই স্কুলে দেরি করে পৌঁছায়। অথচ রাগ করেন শিক্ষকরা!”

পিকআপচালক আরিফ হোসেন বলেন, “লোড গাড়ি গর্তে পড়ে আটকে যায়, সময় নষ্ট হয়, মালামাল পৌঁছাতেও বিলম্ব হয়।”

এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। উপজেলার প্রতিটি সড়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, “বড়দারোগাহাট-বগাচতর বেড়িবাঁধ সড়কটি সীতাকুণ্ড উপজেলার আওতায় পড়ে। সেখানে ইতোমধ্যে দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে, এখন কাজ শুরুর অপেক্ষায়।”

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, “জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্টসহ মোট ১৮ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজের দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।”

তিনি জানান, “জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়কের সাত কিলোমিটার অংশ ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুট প্রশস্ত করে নতুনভাবে কার্পেটিং করা হবে। মুহুরীপ্রজেক্ট থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের মূল গেট পর্যন্ত নতুন একটি সড়কের বাজেটও অনুমোদন হয়েছে।”



banner close
banner close