২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট। ঘড়ির কাঁটা ঠিক বারটার ঘরে। কুষ্টিয়া সদর থানা সংলগ্ন একটি স্থানে কয়েকশ ছাত্র-জনতার সাথে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার আলাউদ্দিন।
ঠিক সেই মূহুর্তে পুলিশের এলোপাথাড়ি ছোড়া ছররা গুলিতে সারা শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায় আলাউদ্দিনের। পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি গলায় বিদ্ধ হলে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি।
আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে দ্রুত উদ্ধার করে আলাউদ্দিনকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
অস্ত্রোপচার করে আলাউদ্দিনের গলা থেকে গুলি বের করা হলেও শরীরে এখনো অন্তত ২০টি গুলি রয়ে গেছে। এই গুলিগুলো বের করলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাই শরীরে গুলির যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে আছেন আলাউদ্দিন।
জুলাইযোদ্ধা আলাউদ্দিন জেলার জীবননগর পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বসতিপাড়ার মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে। চাকরির সুবাদে আলাউদ্দিন তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে কুষ্টিয়া থানাপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন।
বাংলা এডিশনকে আলাউদ্দিন বলেন, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে জুলাই আন্দোলনে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। চাকরির সুবাদে কুষ্টিয়া থেকে আমি আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলন চলছিলো কুষ্টিয়া থানার কাছেই। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে আমার সামনে থাকা এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ঘটনাস্থলেই। এরপর মুহূর্তেই আমার গলাসহ সারা শরীর ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
আলাউদ্দিন বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হলে আমার সহকর্মী রকিসহ অনেকে আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুষ্টিয়ার বেসরকারি আদ দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, প্রথমে আমার গলায় অস্ত্রোপচার করে ছররা গুলি বের করেন চিকিৎসক। পরে চিকিৎসক আমাকে জানান শরীরের বাকি গুলিগুলো এখনই বের করার দরকার নেই। একসাথে এত গুলি বের করলে শরীরে নানার ধরনের সমস্যা হতে পারে। সব গুলি না বের করার কারণে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে।
এই জুলাইযোদ্ধা বলেন, আমি যখন আন্দোলনে গিয়েছি তখন থেকে আমার পরিবার দুশ্চিন্তার মধ্যেই দিন পার করছিল। চারদিকে পুলিশের ধরপাকড়, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে ছিল। তবুও আমি ফিরে আসিনি সামনে থেকে আন্দোলন চালিয়েছি।
তিনি বলেন, আন্দোলনের আগে আমি কুয়েতে ছিলাম। আন্দোলনের পর কুয়েতে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করি। আমি ভিসাও পাই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শরীরে গুলি থাকায় আমাকে আনফিট দিলে আমার ভিসা ক্যানসেল হয়ে যায়। আমার জন্য বড় ক্ষতি হলেও স্বৈরাচারী হাসিনার পতনে আমি অনেক খুশি।
আলাউদ্দিন আরও বলেন, আমি চাই আগামীতে যে দলই সরকার গঠণ করুক না কেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের যথাযথ মর্যাদা যেন দেওয়া হয়। সেই সাথে গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী হাসিনা দেশের যে ক্ষতি করেছে সে সব থেকে উন্নতি যেন হয়।
আরও পড়ুন:








