ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সেই জুলাই -আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি। গত বছরের এই দিনে ছাত্র জনতার আন্দোলনে মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত সেই সময়ের দুঃসহ স্মৃতির কথা আজও ভুলতে পারেনি মাকসুদুর রহমান মুন্না। স্বৈরাচার পতনের প্রায় এক বছর পূর্ণ হলেও মাকসুদুর রহমান মুন্নার শরীরে আজও রয়েছে ছোট্ট দুটি গুলির টুকরো। যার ব্যাথার যন্ত্রণা আজও তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন।
জানা যায়, এই মাকসুদুর রহমান মুন্না মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের হাট বাসুদেবপুর গ্রামের নাজমুল হোসেনের ছেলে। ২০২২ সালে ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হয়। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে প্রায় এক বছর পর গ্রামে এসে খাজা রহমত আলী ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হন। এইচএসসিতে ভাল ফলাফলের আশায় কোচিং করতে ঢাকার যান। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় বড় ভাইয়র বাসায় থাকতেন মুন্না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অন্যান্য বন্ধু বান্ধোব ও পরিচিতজনদের সাথে অংশ নেন স্বৈরাচার পতনের ছাত্রজনতার আন্দোলনে। ওই দিন মিছিলে পুলিশের গুলিতে আহত হয় মাকসুদুর রহমান মুন্না।
আহত মাকসুদুর রহমান মুন্না সেদিনের বর্ণনা দিয়ে ইনকিলাবকে বলেন, গেন্ডারিয়া মুরগীটোলা মোড় থেকে মিছিল নিয়ে ধোলাইখাল পাড় হয়ে বংশাল থানার সামনে আসতে না আসতেই আমাদের মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আমিও দৌড় দেই। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে একটি গুলি এসে আমার ডান পাশের পাজরে লাগে। সাথে সাথে আমি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ি। বন্ধুবন্ধব আমাকে প্রথমে মিডফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আমাকে রেফার করে মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। সেখানে প্রায় দুই মাস চিকিৎসাধী ছিলাম। বুকের পাশ দিয়ে ঢুকে যাওয়া গুলিটি তিনটি টুকরো হয়। তার বড় অংশটি বের করতে পারলেও এখনো গুলির ছোট্ট দুটি খন্ড ভেতরেই রয়ে গেছে। যার ফলে এখনো মাঝে মাঝে গুলিবিদ্ধ স্থানে ব্যথা করে। আসলে সত্যি কথা বলতে কি সে দিনের সেই দৃশ্যের কথা মবে পড়লে এখনো আমার গা শিওরে ওঠে। এই স্মৃতি আসলে ভোলার নয়।
মুন্নার বাবা নাজমুল হুসাইন জানান, আমার ছোট ছেলে মুন্না। ঢাকায় ওর বড় ভাইয়ের বাসায় কোচিং করতে গিয়ে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে অংশ নেয় এবং মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়। ওর চিকিৎসার পেছনে আমার প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তারপরেও আমি আমার ছেলের জন্য গর্ববোধ করি। কারণ সে দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়ে গুলি খেয়েছিল। যে আন্দোলনে একটা স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে।
মাকসুদুর রহমান মুন্না যোদ্ধাহত সদস্য হিসেবে সরকারিভাবে ১ লক্ষ টাকা চিকিৎসার জন্য অনুদান পেয়েছে বলেও জানান বাবা নাজমুল হুসাইন।
আরও পড়ুন:








