সার্বিয়া প্রবাসী ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দা ফয়জুল বিল্লাহ পাপ্পুকে অপহরণের পর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সন্ধান মেলেনি তার। গত ১৪ জুন শেষবার পাপ্পু ভিডিও কলে কথা বলে পরিবারের সাথে। সেসময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পায় স্বজনেরা। ওইদিনের পর থেকে পাপ্পু আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পরিবারের অভিযোগ নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
পাপ্পুর মা আয়েশা বেগম বাদী হয়ে গত ১৬ জুন সোনাগাজী মডেল থানায় এ নিয়ে মামলা করেন। পরে পুলিশ মোবাইল কলের সূত্র ধরে ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
এদিকে, একাধিক বিদেশি ফোন নাম্বার থেকে কল দিয়ে পাপ্পুর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার।
পাপ্পুর মা আয়েশা বেগম বাংলা এডিশনকে বলেন, গত ১৪ জুন রাতে একটি অচেনা নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল পান তিনি। কল রিসিভ করে পাপ্পুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম দেখতে পান। টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীরা হিন্দিতে কথা বলে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠায়। সে সময় পাপ্পুর ছোট ভাই-বোন তাদের ভাইকে ফেরত দেয়ার আকুতি জানায়।
এরপরও কয়েক দফা পাপ্পুকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং ভিডিও কলে তার আর্তনাদ শোনানো হয় পরিবারকে। পরে বাংলাদেশের আটটি ব্যাংক একাউন্ট ও মোবাইল নাম্বার পাঠিয়ে মুক্তিপন দাবি করা হয়। মুক্তিপন না দিলে ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয় অপহরণকারীরা।
গত ১৭ জুন রাতে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল করে জানানো হয়, ‘নির্যাতন সইতে না পেরে পাপ্পু বসনিয়ার একটি হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে।’তবে এর কোন প্রমাণ এখনো পায়নি তার পরিবার।
এখন পাগলপ্রায় মা আয়েশা বেগম পাপ্পুর মৃত্যু হলে তার মরদেহ বুঝে পেতে, আর বেঁচে থাকলে ছেলের সন্ধান পেতে প্রধান উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নিখোঁজ পাপ্পু সোনাগাজীর সেরাজুল হকের বড় ছেলে। উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে পাঁচ বছর আগে সার্বিয়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন পরিণত হয়েছে ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে। পরিবারটি এখনো জানে না পাপ্পু আদৌও বেঁচে আছে, নাকি নেই। পাপ্পুর খোঁজ পেতে পরিবারের সদস্যরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। এতে কয়েকজন প্রবাসীকে সন্দেহের কথা জানায় পরিবার।
স্থানীয় ও পরিবারের ধারণা, পাপ্পু সার্বিয়া যাওয়ার পর মানবপাচার সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে। ওই সিন্ডিকেট তার মাধ্যমে সার্বিয়া নেয়ার কথা বলে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেয়। পরে সিন্ডিকেটের সাথে বিরোধ হওয়ায় তাকে অপহরণ করা হয়। ওই সিন্ডিকেটই তাকে অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ চাওয়ার সাথে জড়িত বলে মনে করছে তারা।
আরও পড়ুন:








