শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৫ পৌষ, ১৪৩২

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে থমকে গেছে হবিগঞ্জের চাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট, ২০২৫ ১৮:২৩

শেয়ার

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে থমকে গেছে হবিগঞ্জের চাকা
ছবি সংগৃহীত

শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব সরাসরি পড়েছে হবিগঞ্জের প্রান্তিক অর্থনীতি, শিল্পকারখানা ও চা বাগানের উৎপাদন খাতে। মাত্র দুদিনেই থমকে গেছে কলকারখানার চাকা, চা বাগানে জমে গেছে কাঁচা পাতা, আর ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এমনকি ইজিবাইকের চার্জ ও সিএনজির গ্যাস সংকট দেখিয়ে যাত্রীদের পকেট কেটে নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে পুড়ে যায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সফরমার। অগ্নিকাণ্ডের পর পুরো হবিগঞ্জ জেলায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর চারটি উপজেলায় আংশিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও এখনো পুরোদমে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

চায়ের ভরা মৌসুমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে জেলার ২৩টি চা বাগান। মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক দেওয়ান বাহাউদ্দিন লিটন জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় শত শত কেজি কাঁচা পাতা পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সুরমা চা বাগানের ব্যবস্থাপক বাবুল সরকার বলেন, ‘চা উৎপাদনের মৌসুমে প্রথমবারের মতো এত বড় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়তে হলো। বৈদ্যুতিক ব্লোয়ারের অভাবে পাতাও শুকানো যাচ্ছে না।’

মাধবপুর ও আশপাশের ছোট ছোট শিল্পকারখানায় উৎপাদন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। বড় কারখানাগুলো নিজস্ব জেনারেটর চালিয়ে কোনোমতে টিকে থাকলেও ছোট শিল্প মালিকরা বিপাকে পড়েছেন।

ফারইস্ট কারখানার পরিচালক জামান উদ্দিন বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ছাড়া শিল্প চলতে পারে না। কয়েক দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক না হলে আমাদের উৎপাদন ধসে পড়বে।’

মাধবপুর বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর কবির জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পচনশীল পণ্যে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ইজিবাইক চার্জ দিতে না পারায় যানবাহন কমে গেছে। চালকেরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। বানিয়াচংয়ের ফারুক আহমদ বলেন, উমেদনগর থেকে বানিয়াচং যেতে সিএনজিচালক মাথাপিছু ১০০ টাকা দাবি করেন, যেখানে সাধারণত ভাড়া ৫০ টাকা।

হবিগঞ্জ শহরেও একই চিত্র। ১০ টাকার জায়গায় ২০–৩০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এই সুযোগে টমটম ও অটোরিকশা চালকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী মমিন বলেন, ‘এ দেশে বিপর্যয়কে অনেকে ব্যবসার সুযোগ হিসেবে নেয়। বিদ্যুৎ নেই মানেই ভাড়া দ্বিগুণ! এটি খুবই দুঃখজনক।’

বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী রাসেল খান জানান, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পিডি ব্রেকার ফেলার কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে উপকেন্দ্র সচল করার কাজ চলছে।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জিএম মো. জিল্লুর রহমান জানান, হবিগঞ্জের চাহিদা ১৭০ মেগাওয়াট হলেও এখন অন্য জেলা থেকে মাত্র ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।



banner close
banner close