শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৫ পৌষ, ১৪৩২

মধুপুরে ভরা মৌসুমে আনারসের রমরমা বাজার, চাষিদের মুখে হাসি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট, ২০২৫ ১১:০৩

আপডেট: ৩ আগস্ট, ২০২৫ ১১:০৫

শেয়ার

মধুপুরে ভরা মৌসুমে আনারসের রমরমা বাজার, চাষিদের মুখে হাসি
ছবি বাংলা এডিশন

আনারস চাষে অনন্য অবদান রাখা টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা এখন রসালো ফলের ভরপুর মৌসুমে ব্যস্ত সময় পার করছে। ‘আনারসের রাজধানী’ নামে পরিচিত মধুপুর গড়ের পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে মাঠে মাঠে ঝুলছে সোনালি রঙের শত শত আনারস। সরগরম হাট-বাজারে জমে উঠেছে ফল বিক্রি।

চাষিরা জানান, এ বছর প্রচলিত জায়ান্টকিউ জাতের পাশাপাশি ফিলিপাইনের উন্নতজাত 'এমডি-টু' এবং পার্বত্য অঞ্চলের সুস্বাদু জলডুগি (যা স্থানীয়ভাবে ‘হানি কুইন’ নামেও পরিচিত) চাষ হচ্ছে। জলডুগি আকারে ছোট হলেও অতিমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে।

চলতি মৌসুমে আনারস উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষি ও বিক্রেতারা। স্থানীয় গারোবাজার ও জলছত্র হাটে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলছে ক্রয়-বিক্রয়। যেখানে আগে সপ্তাহে দুদিন হাট বসত, সেখানে এখন প্রতিদিনই হাট জমজমাট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোরে কৃষকেরা ক্ষেত থেকে পাকা আনারস সংগ্রহ করে সাইকেল, ভ্যান ও ইজিবাইকে করে হাটে আনছেন। হাটে এসেছেন স্থানীয় খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকাররা। চলছে দফায় দফায় দর কষাকষি।

বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিটি আনারস বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায়, আর খুচরা বাজারে আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

মহিষমারা গ্রামের চাষি মজনু ইসলাম বলেন, “আমি সাড়ে ৪ শতাংশ জমিতে আনারস চাষ করেছি। ছোট আনারস ১৫-২০ টাকায়, বড়টি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।” তিনি জানান, আনারস হাটে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে এবং সেগুলো ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

একই গ্রামের চাষি মুকুল মন্ডল জানান, তিনি ৩৭০ শতাংশ জমিতে আনারস চাষ করেছেন এবং মৌসুমের শুরু থেকেই ভালো দাম পাচ্ছেন বলে আশা প্রকাশ করেন পুরো মৌসুমেই লাভবান হবেন।

গারোবাজারের পাইকার রফিকুল ইসলাম জানান, এখান থেকে প্রতিদিন তিনি ঢাকায় আনারস সরবরাহ করেন। অপর পাইকার উজ্জ্বল সরকার বলেন, “আগে পথে পথে চাঁদা দিতে হতো, সিন্ডিকেটের চাপ ছিল। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো।”

তবে চাষিদের অভিযোগ, এত বড় উৎপাদন এলাকা হলেও মধুপুরে এখনো কোনো ফল সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন অনেক কৃষক। দ্রুত সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ চান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মধুপুর গড় এলাকায় ৭ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমিতে আনারস আবাদ হয়েছিল, উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। চলতি বছর চাষের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৯৪ হেক্টরে, এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৬০১ মেট্রিক টন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, “মধুপুর গড়ের পাহাড়ি জমি আনারস চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে, কৃষকেরাও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।”



banner close
banner close