প্রতিবছর বন্যা আর নদীভাঙনে কুড়িগ্রামের মানুষ ঘরবাড়ি আর আবাদি জমিসহ শেষ সম্বল হারাতে থাকলেও এই জেলার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সরকারি বাসভবন যেনো বিলাসীতার প্রতীক। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সেখানে তৈরি করা হচ্ছে বিশালাকার জল ফোয়ারা। বাসভবনের সীমানা প্রাচীরের ভিতরে নকশা বহির্ভুতভাবে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে এই ফোয়ারা। এ যেনো ডিসির ফোয়ারা বিলাস।
এছাড়াও ডিসির বাসভবন চত্বরে রয়েছে সুইমিং পুল। তবে এসব স্থাপনা নির্মাণে অর্থ বরাদ্দের সুনির্দিষ্ট কোনো খাত জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসন। অলংকারিক এই স্থাপনাগুলো প্রাচীর বেষ্টিত হওয়ায় স্থানীয় জনগণ এর সৌন্দর্য উপভোগ করার কোনও সুযোগও পায় না। এটি শুধুমাত্র জেলা প্রশাসকের বিলাসীতার প্রতীক হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে বলে মত স্থানীয়দের।
এছাড়াও উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন জেলা প্রশাসক তার সরকারি বাসভবনে জল ফোয়ারা কিংবা সুইমিং পুল নির্মাণ করতে পারেন কিনা এবং সরকারিভাবে এসব স্থাপনার সুবিধা পেতে পারেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, জেলা প্রশাসকের দ্বিতল বাসভবনের রক্ষণাবেক্ষণ স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগ করে থাকে। বাসভবনে কোনও কিছু নির্মাণ করার প্রয়োজন হলে তা চাহিদার প্রেক্ষিতে গণপূর্ত বিভাগ করে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি নির্মাণাধীন জল ফোয়ারাটি গণপূর্ত বিভাগ করছে না। বর্তমান ডিসি নুসরাত সুলতানা নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে ফোয়ারাটি নির্মাণ করছেন। তবে এটি নির্মাণে কোন খাত থেকে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে ভবন চত্বরে একটি সুইমিং পুল তৈরি করা হয়েছে। টাইলস ও বিভিন্ন অলংকারিক উপকরণের সমন্বয়ে তৈরি সুইমিং পুলটি উপরে শেড দিয়ে রাখা হয়েছে যাতে এর পানিতে কোনো ময়লা আবর্জনা না পড়ে। ২০২২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রেজাউল করিমের আমলে এটি নির্মাণ করা হয় বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গণপূর্ত বিভাগ বলছে, ডিসি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাসভবনে এ ধরণের স্থাপনা নির্মাণের এখতিয়ার তাদের নেই। এসব নির্মাণে তারা সরকারি অর্থ ব্যয় বরাদ্দের অনুমোদন পান না। ফলে গণপূর্তের পক্ষে জল ফোয়ারা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। যদিও এ নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের কোনও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এদিকে কুড়িগ্রাম ডিসির বাসভনের রক্ষণাবেক্ষণে গণপূর্ত বিভাগের গত তিন বছরের ব্যয় বরাদ্দের তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে, ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ডিসির বাসভবন মেরামত ও রক্ষাণাবেক্ষণে মোট ৬৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করা হলেও কাজের তালিকায় ফোয়ারা কিংবা সুইমিং পুল নির্মাণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এর আগের দুই অর্থ বছরের কাজের তালিকা যাচাই করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকারি ভবনে এসব স্থাপনা নির্মাণে কোন খাত থেকে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন:








