শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৫ পৌষ, ১৪৩২

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভাঙ্গন অব্যাহত : উপড়ে পড়ছে ঝাউগাছ, শংকিত মানুষ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১ আগস্ট, ২০২৫ ১১:৪৫

শেয়ার

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভাঙ্গন অব্যাহত : উপড়ে পড়ছে ঝাউগাছ, শংকিত মানুষ
ছবি সংগৃহীত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। বলতে গেলে রুদ্রমূর্তি ধারন করেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সাগরের বড় বড় ঢেউ আচড়ে পড়ছে উপকূলে। এতে করে শংকিত কক্সবাজারবাসী। ঢেউয়ের স্রোতে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গনের পাশাপাশি উপড়ে পড়ছে ঝাউবাগান।

কক্সবাজারের সমুদ্র তীর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে। সাগরে সৃষ্ট নিন্মচাপের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে উপরে যাওয়া ঝাউগাছ আর সাগর পাড়ের ভাঙ্গনের এ ভয়াবহতায় শংকিত কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ।

ইতিমধ্যে উত্তাল সাগরের স্রোতে কয়েক বছরে ৩-৪ কিলোমিটার লোকালয়ের কাছে চলে এসেছে সমুদ্র। সৈকতের এমন ভয়াবহ রুপ আগে দেখেনি বলে এমনটাই বলছে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ।

সরেজমিনে কবিতা চত্ত্বর, ডায়াবেটিস পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট ও লাবনী পয়েন্ট সহ সমুদ্র পাড়ের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা গেছে জিও ব্যাগ ও কংক্রিটের সৃষ্ট বাঁধ দিয়েও মানছেনা এই ভাঙ্গন। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বহু পুরাতন স্থাপনা। মাইলের পর মাইল উপড়ে গিয়েছে ঝাউবন।

দীর্ঘ দিন ধরে সমুদ্র তীরে কাজ করা কিটকট ছাতা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত নুরুল আলম বলেন "৫-৬ বছর ধরে বীচে কাজ করছি। শৈবাল ক্যাফের স্থাপনা আর কংক্রিটের রাস্তা ভেঙে গেছে। জানিনা সামনে এ ভাঙ্গন কত দূর যায়। কোন ব্যবস্থা না নিলে সামনে এ ভাঙ্গন হয়তো আরো এগিয়ে যাবে"

সৈকতে ঘুরতে আসা কক্সবাজারের বাসিন্দা আবু জাফর বলেন সৈকত পাড় যেভাবে ভাঙ্গছে দেখে মনে হচ্ছে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা দিয়েছিলো। তার ফলশ্রুতিতে ধ্বংসস্তুপের মতই দেখাচ্ছে এ সৈকত। অথচ বড় ধরনের দূর্যোগ নয় প্রতিদিনই আস্তে আস্তে ভেঙ্গে এ বিধ্বংসী রুপ ধারন করেছে এ সৈকত।

বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপু বলেন, প্রতি বছর সৈকত পাড় ভাঙ্গে কিন্তু বর্তমানে ভাঙ্গন বিধ্বংসী রুপ ধারণ করেছে৷ এ ক্ষতি মেটাতে প্রকৃতিকে প্রকৃতি দিয়েই রক্ষা করতে হবে। শেকড় যুক্ত গাছ সৈকতের বালিয়াড়িতে রোপন করলে গাছের শেখর মাটি আকড়ে ধরে রাখে। ফলে ভাঙ্গন অনেকাংশে কমে আসবে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্র ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে সমুদ্র ভাঙ্গনের কারণ হল সাগর তীর থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন ও জলবায়ু পরিবর্তন। এ বীচকে কেন্দ্র করেই কিন্তু কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা পরিচালিত হয়। সমুদ্র ভাঙ্গন রোধে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পর্যটন ব্যবসায় বড় ধরনের ধ্বস নামবে বলে আমি মনে করি।

এ পর্যন্ত সৈকতে কত পরিমান ঝাউগাছ নষ্ট হয়েছে এবং নতুন করে ঝাউ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: নুরুল ইসলাম জানান, রেন্জ অফিসারদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানতে চেয়ে রির্পোট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহন করবে বন বিভাগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নুরুল ইসলাম বলেন, দ্রুত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক মহদয়ের কাছে দাখিল করবো। উনি যদি মনে করে কাজটি যুক্তি সংগত তাহলে এবং জরুরী ঘোষণা করলেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। ভাঙ্গন রোধে সরকারি কোন পরিকল্পনা আছে কিনা, কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা,

সমুদ্রের এমন ধেয়ে আসাকে প্রতিহত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে খুব শীঘ্রই কক্সবাজারের লোকালয় গিলে খাবে সমুদ্র, এমনটাই মনে করছে সচেতন স্থানীয় বাসিন্দরা।



banner close
banner close