বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় টানা বর্ষণে সীমান্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থেকে আমতলী মার্ট পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ জনবহুল সড়কের বেশিরভাগ স্থানে মাটিধসে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সদর ইউনিয়নের চাকঢালা এলাকার প্রবেশপথে বড় আকারের ধ্বসে ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে চাকঢালা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন সীমান্তবর্তী চাকঢালা এলাকার হাজারো মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বাজারের ব্যবসায়ী ও কৃষকরা যাতায়াত করে থাকেন। এতে শুধু সাধারণ মানুষের ভোগান্তিই বাড়েনি, চাকঢালার উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ছোট যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও বড় কোনো পণ্যবাহী গাড়ি আর এই সড়ক ব্যবহার করতে পারছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন এ গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সড়কটি দুই বছর আগে সংস্কার করা হলেও তা ছিল পরিকল্পনাহীন ও অপর্যাপ্ত। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই আবারও ভাঙনের কবলে পড়ে সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সচেতন মহলের মতে, সঠিকভাবে ড্রেনেজ এবং গাইডওয়াল নির্মাণের অভাবেই আজকের এই বিপর্যয়।
স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ, চাকঢালা বাজারের ব্যবসায়ী মো. কামাল এবং মহিছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, "প্রতি বছর বর্ষায় সড়কের পাশে ছড়ার পানি বেড়ে গিয়ে সড়কের মাটি সরে যায়। গাইডওয়াল নির্মাণ না করলে একে একে পুরো সড়কটি বিলীন হয়ে যাবে।"
তারা আরও জানান, সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই সড়কটি ১১ বিজিবির নিকুছড় ও চাকঢালা বিওপি ক্যাম্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিজিবি সদস্যদের যাতায়াত, রসদ সরবরাহ এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম এই সড়কের উপর নির্ভরশীল।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের প্রশাসক মাহবুব এলাহী বলেন, "উপজেলার খাদ্যশস্য উৎপাদনের বড় একটি অংশ আসে চাকঢালা এলাকার গ্রামগুলো থেকে। ভাঙনের কারণে সেই পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এতে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।"
তিনি আরও জানান, সড়কের বিভিন্ন অংশ ইতিমধ্যে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে, যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সড়কটির দুরবস্থার বিষয়টি জানতে চাইলে ১১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম কফিল উদ্দিন কায়েস বলেন, "বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি। দ্রুত সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবহিত করা হবে।"
তবে বান্দরবান জেলা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাখায়ত হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চাকঢালা বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিজিবির ক্যাম্পের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দ্রুত সংস্কার এবং গাইডওয়াল নির্মাণের দাবিতে এলাকাবাসী ও সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আরও পড়ুন:








