রবিবার

২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৬ পৌষ, ১৪৩২

হিন্দু বাড়িতে হামলা : পরিকল্পিতভাবে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ ইস্যু বানানোর চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই, ২০২৫ ০৬:১৬

শেয়ার

হিন্দু বাড়িতে হামলা : পরিকল্পিতভাবে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ ইস্যু বানানোর চেষ্টা
ছবি: সংগৃহীত

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু বানানোর পরিকল্পিত পরিকল্পনা চলছে। একটি মহল নেপথ্যে থেকে উস্কানি দিয়ে এবং হিন্দুদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তবে বর্তমানে পুরো এলাকায় শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ চলছে। তবে আশপাশের বাসিন্দারা জানান, কিছু গণমাধ্যমকর্মী, ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ইউটিউবার ক্ষতিগ্রস্থদেরসংখ্যালঘু নির্যাতনপ্রচারণা করলে প্রচুর টাকা পয়সা পাওয়া যাবে এমন লোভ দেখাচ্ছে। বালাপাড়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টায় এসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, গত শনিবার রঞ্জন কুমার নামের এক যুবক ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেয়। তার পোস্টটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগে শনিবার রাতে উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রাম থেকে কিশোরকে আটক করে পুলিশ। বিষয়টি জানাজানি হলে পাশের গ্রামের লোকজন এসে ওই কিশোরের বাড়ি মনে করে অন্য আরেকজনের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দ্রুত সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান এবং হিন্দু মুসলিমদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। কিন্তু বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য নেপথ্যে থেকে একটি মহল কলকাঠি নেড়ে চলেছেন। তারা গ্রামের হিন্দুদের নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাবার পরামর্শ দেন। এতে করে অনেকেই ভয়ে এলাকা ছেড়ে আশ-পাশের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মহলটি পরিকল্পিতভাবে মহল্লার হিন্দুদের মাঝে মোবাইলে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেন। অনেকেই আবার ঘটনায় সুযোগ নেয়ারও চেষ্টা চালাতে থাকেন। নেপথ্যের ইন্ধন দেয়া মহলটি রংপুর শহর থেকে মোবাইলে তাদের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। ভিউ (দর্শক) পাওয়ার আশায় তরুণ প্রজন্মের ইউটিউবার, টিকটকার ফেসবুকাররা হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে থাকায় আরো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আর সুযোগটি কাজে লাগাতে থাকেন সুযোগ সন্ধানীরা। তারা ইন্ধনদাতাদের পরামর্শ অনুযায়ী মিডিয়ার সামনে কথা বলতে থাকেন।

কয়েকজন হিন্দু বাসিন্দারা জানান, শনিবার সন্ধ্যার দিকে পুলিশ এক যুবককে আটক করে নিয়ে গেছে। এরপর পাশের এলাকার একদল লোক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে স্রোলগান দিতে থাকে। সময় গ্রামের লোকজন ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে ওই যুবকের বাড়ি মনে করে তারা অন্য একজনের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালায়। পুলিশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসার কথা শুনে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তার মতে, ১৫ থেকে ২০টির মতো পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আতঙ্কে ৩০টির মতো পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ১০/১২টি বাড়ি ভাঙচুরের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার মো. আবু সায়েমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসক এবং তিনিসহ (পুলিশ সুপার) পুলিশ জেলা প্রশাসনের অন্য পদস্থ কর্মকর্তারা সোমবার রাতেই ঘটাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের মতে, ১২টি বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি আংশিক এবং কয়েকটি পুরোপুরি ভাংচুর করা হয়েছে। এতে ২২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ইতোমধ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি মেরামত করে দেয়ার কাজ সম্পন্নের পথে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে। সেনাবাহিনী পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের খুব শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। কারা এর সাথে জড়িত তদন্ত চলছে।

এছাড়া, রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারাও সোমবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তার নির্দেশে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বাড়ি-ঘর মেরামত করার কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, রঞ্জন আটক হওয়ার পর থেকেই তার বাবা, দাদা এবং চাচার পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অন্য ১৯টি পরিবারের সকল পুরুষ সদস্য তাদের নিজ নিজ বাড়িতেই আছেন। ঘরবাড়ি ভাঙা থাকায় কিছু নারী সদস্য মালামাল নিয়ে রিকশা ভ্যানযোগে অন্যত্র চলে গেছেন। এলাকায় সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।



banner close
banner close