গত আড়াই দশকে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪২৫ জন মানুষ। আহত হয়েছেন আরও ৯৫ জন। বন বিভাগ বলছে, প্রকল্পভিত্তিক উদ্যোগ, নিরাপত্তা জোরদার এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে গত পাঁচ বছরে বাঘ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। তবে স্থানীয়রা বলছেন, বাঘে খাওয়া মানুষের পরিবারগুলো বেঁচে থাকলেও তাদের জীবনধারা হয়ে পড়ে অসহনীয়।
শরণখোলা উপজেলার আব্দুস সামাদ হাওলাদারের ঘটনা তারই সাক্ষ্য দেয়। গহীন বনে কাঠ সংগ্রহের সময় বাঘের আক্রমণে তার চোখ দুটি নষ্ট হয়ে যায়। অন্য সহযোগীরা এগিয়ে না এলে হয়তো প্রাণটিও রক্ষা পেত না। এভাবে প্রতিনিয়তই নানা কারণে বনে প্রবেশকারী জেলেরা বাঘের কবলে পড়ছেন।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন শিপার হাওলাদার (২২)। চারদিন পর তার দেহবিচ্ছিন্ন মাথা ও প্যান্ট উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরিবারের অভিযোগ, বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই মাছ ধরতে যাওয়ায় তারা কোনো সরকারি সুবিধা পাননি। শিপারের বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী মোরশেদা বেগম ও পাঁচ বছর বয়সী কন্যা সিনথিয়া এখন দিন কাটাচ্ছেন চরম দারিদ্রে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৫ জন এবং আহত হয়েছেন ৯৫ জন। যদিও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারি তালিকায় আসেনি। ২০১১ সালে ক্ষতিপূরণ নীতিমালা চালুর পর থেকে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগ এখন পর্যন্ত ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, বন্য প্রাণীর আক্রমণে কেউ মারা গেলে ১ লাখ, আহত হলে ৫০ হাজার এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় বেশিরভাগ পরিবারই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন। অনেকের দাবি, আহত বা নিহতের পরিবারকে মাসিক ভাতার আওতায় আনা হোক।
বাঘ বেড়েছে ১০ শতাংশ, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতিতে ৬৩৯টি গ্রিডে জরিপ চালিয়ে ১২৫টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি।
খুলনা বন অঞ্চলের সংরক্ষক ইমরান আহমেদ জানান, বাঘ রক্ষায় ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’ গঠন, ৭৪ কিমি ফেন্সিং (যার মধ্যে ৬০ কিমি সম্পন্ন), এবং সুপেয় পানি ও আবাসন নিশ্চিত করাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বাঘ বিধবাদের জন্য বিশেষ সহায়তা চালু রয়েছে এবং তাদের নির্দিষ্ট তিনটি খালে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে 'সুন্দরবন রক্ষায় আমরা' সংগঠনের সমন্বয়কারী নুর আলম শেখ বলেন, “২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। সেই হিসেবে এই বৃদ্ধির হার আশানুরূপ নয়।” তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বিষ দিয়ে মাছ নিধন এবং আন্তর্জাতিক পাচার সিন্ডিকেটের কারণে বাঘ ও অন্যান্য প্রাণী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আরও পড়ুন:








