শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৫ পৌষ, ১৪৩২

সেতু নয়, এখনও নৌকাই ভরসা: পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই, ২০২৫ ১৭:৫৯

শেয়ার

সেতু নয়, এখনও নৌকাই ভরসা: পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ
ছবি সংগৃহীত

ফেনী নদীর ওপর নির্মিতব্য সেতু বদলে দিতে পারত পুরো এলাকার চিত্র। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, রোগী, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি হতে পারত নিরাপদ ভরসা। কিন্তু নির্মাণ শুরুর পাঁচ বছর পরেও সেতুটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এলাকাবাসী আজও চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ধুম ইউনিয়ন এবং ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের সংযোগস্থলে ২৫২ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করছে হক ট্রেডার্স।

২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করেন মিরসরাইয়ের তৎকালীন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০২২ সালের অক্টোবরের মধ্যেই সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালেও প্রকল্পটি শেষ না হওয়ায় সেতুটি হয়ে উঠেছে এক অবস্হানহীন কাঠামো মাত্র।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর মূল কাঠামোর প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শুরুই হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে থাকায় সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এতে সেতুর ব্যবহারিক সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।

বর্তমানে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা প্রতিদিন ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে ছোট ডিঙি নৌকায় ফেনী নদী পার হচ্ছেন। শুষ্ক মৌসুমে পারাপার কিছুটা সহজ হলেও বর্ষায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।

আলোকদিয়ার বাসিন্দা চেমনা বেগম বলেন,

"আগে মাত্র ২ টাকায় নৌকা পারাপার হতো, এখন দিতে হয় ১০ টাকা। সেতুটি চালু হলে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারতাম।"

বড়দারোগা হাটের বাসিন্দা জানে আলম বলেন,

"আমার মেয়ে থাকে আলোকদিয়ায়। প্রায়ই নদী পার হতে হয়। বর্ষার দিনে নৌকা চলে না, সন্ধ্যার পরও মেলে না। সেতু চালু হলে শান্তিরহাট বাজারেও ব্যবসা বাড়বে।"

এলজিইডির মিরসরাই উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন,

"জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের কাজ আটকে আছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। অধিগ্রহণ না হলে কাজ আরও বিলম্বিত হবে।"

হক ট্রেডার্সের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন,

"নদীতে পাইলিংয়ের সময় নিচে অবাঞ্ছিত বস্তু থাকায় বোরিং বিলম্বিত হয়েছে। এখন প্রায় ৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে, যা আগামী মাসে শেষ হবে। তবে সংযোগ সড়ক পুরোপুরি জমি অধিগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল।"

স্থানীয়রা মনে করেন, সময়মতো জমি অধিগ্রহণ ও তদারকি নিশ্চিত হলে সেতুটি অনেক আগেই জনগণের কাজে আসতে পারত। তাদের দাবি, দ্রুত জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে সেতুটিকে সচল করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘব করা হোক।



banner close
banner close