ঝালকাঠিতে আলোচিত রুবেল গাজী হত্যা মামলার একজন প্রধান সাক্ষী আব্দুল মন্নান মৃধা (৫২) আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার পর ফেরার পথে হামলার শিকার হয়েছেন। রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত মন্নান মৃধা নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মৃত হাতেম মৃধার পুত্র। তিনি ২০২৩ সালের আলোচিত রুবেল গাজী হত্যা মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন এবং কয়েকজন আসামিকে চিহ্নিত করেন।
সাক্ষ্য শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে আদালত চত্বরে একদল ব্যক্তি তাকে ঘিরে ফেলে। এরপর তারা মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে তাকে গুরুতর জখম করে। এ সময় তার মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, মন্নান মৃধার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আহত অবস্থায় তাকে আদালতের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হলে জেলা ও দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম তাৎক্ষণিক তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহেব হোসেন বলেন, “আদালত চত্বরে একজন সাক্ষীর ওপর এমন নৃশংস হামলা বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য একটি বড় হুমকি। এ ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া প্রয়োজন।”
আহত মন্নান মৃধা বলেন, “আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়। মাথা ও শরীরে হাতুড়ির আঘাতে আমি রক্তাক্ত হই। আমি জীবনের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার চাই।”
নিহত রুবেল গাজীর বাবা ও মামলার বাদী জসিম গাজী বলেন, “আমার ছেলেকে হত্যার পর এখন সাক্ষীকেও হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এতে আমাদের নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে কয়া গ্রামের একটি ইটভাটার সামনে রুবেল গাজী (২২) নামের এক যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ৪ অক্টোবর ঢাকায় মারা যান। পরবর্তীতে ৮ অক্টোবর নিহত রুবেলের বাবা জসিম গাজী ১৮ জনকে আসামি করে নলছিটি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
চলতি বছরের ৩ মে মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযুক্তরা হলেন: অহিদুল ইসলাম মৃধা, রফিক মৃধা, সোহেল মাঝি, সাইদুল ফকির, সালাম ফকির, এনায়েতুর রহমান, কালাম খান, নাসির খান, এরশাদ হাওলাদার, রবিউল হাওলাদার, বাবুল মৃধা ও সোহরাব মৃধা।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “আদালতের নির্দেশ পেয়েছি। হামলাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
আরও পড়ুন:








