শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৫ পৌষ, ১৪৩২

চোখ হারিয়েও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন জুলাই যোদ্ধা লামিম

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই, ২০২৫ ১৪:০৭

শেয়ার

চোখ হারিয়েও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন জুলাই যোদ্ধা লামিম
ছবি সংগৃহীত

এক চোখ হারিয়েছেন আন্দোলনে, তবু থেমে নেই স্বপ্ন। ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারানো ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণ লামিম হাসান এখনো স্বপ্ন দেখেন একটি ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। মাকে বলেছিলেন, খেলতে যাবেন। কিন্তু বেরিয়ে পড়েন আন্দোলনে। রাজধানীর উত্তপ্ত রাজপথে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বাম চোখে গুলিবিদ্ধ হন লামিম। সহযোদ্ধারা রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর দীর্ঘ চিকিৎসা, তবু চোখ আর ফিরে পাননি তিনি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের মমিনুল ইসলাম ও সাবিনা বেগম দম্পতির সন্তান লামিম। চিকিৎসা চললেও তার চোখে এখন দৃষ্টি তো নেই-ই, বরং সমস্যা আরও বাড়ছে।

তবু লামিমের কোনো আফসোস নেই। তিনি বলেন, “আমার চোখ তো নেই, কিন্তু অনেকেই তো শহীদ হয়েছেন। আমি তাঁদের জন্য দোয়া করি। আমি চাই, নতুন বাংলাদেশ হোক—যেখানে থাকবে না অন্যায়, দুর্নীতি বা হানাহানি। আমি চাই, যারা এখনো অসুস্থ, তাঁদের ভালো চিকিৎসা হোক। আর যারা অঙ্গ হারিয়েছেন, তাঁদের যেন বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়।”

ছেলের এই আত্মত্যাগে গর্বিত তার পরিবার। তবে নির্বাচনের আগে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি যেন বাস্তবায়ন হয়—এটাই এখন তাদের একান্ত দাবি।

লামিমের বাবা মমিনুল ইসলাম বলেন, “ছেলে চোখ হারালেও আফসোস নেই। বরং তার এই আত্মত্যাগ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনে সহায়ক হয়েছে বলে আমরা গর্ব করি। তবে এখন আবার চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা জমি বন্ধক রেখে চিকিৎসা করেছি। সরকারের সাহায্য ছিল খুব সামান্য। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন আছে।”

আন্দোলনে অংশ নিয়ে এখনো অনেক শিক্ষার্থী শরীরে বুলেট বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের অনেকেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাননি। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কাছে সহযোগিতার জন্য গেলেও তারা সাড়া পাচ্ছেন না।

আহত জুলাই যোদ্ধা মেহরাব হোসেন বলেন, “এক বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা অনেকেই চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা পাইনি। অনেকেই বাদ পড়ে গেছি। দেশ সংস্কারের আগে আমাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।”

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা জানান, জেলায় প্রায় ৩০০ আহত জুলাই যোদ্ধাকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো অনেকের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। যারা বাদ পড়েছেন, তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করে সহায়তা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।



banner close
banner close