রবিবার

২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৬ পৌষ, ১৪৩২

হবিগঞ্জে চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা: ভাতিজিকে কুপিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই, ২০২৫ ১৭:২৫

শেয়ার

হবিগঞ্জে চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা: ভাতিজিকে কুপিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা
ছবি সংগৃহীত

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার এয়াক্তিয়ারপুর গ্রামে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার (১০) কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজেই ভাতিজিকে হত্যা করেছেন রেনু মিয়া নামে এক ব্যক্তি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুন সন্ধ্যায় রেনু মিয়া সুমাইয়াকে বাজার থেকে কয়েল আনতে পাঠান। এরপর বাড়ির পাশে ওঁৎ পেতে থাকা অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বের হওয়া এক মুসল্লির চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এসে রেনু মিয়াকে পালিয়ে যেতে দেখেন। গুরুতর অবস্থায় সুমাইয়াকে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং পরে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার সময় রেনু মিয়ার পুত্রবধূ নারজি আক্তার ও প্রতিবেশী কিশোরী শাফলা আক্তার মোবাইলে সুমাইয়ার বক্তব্য ধারণ করেন। ভিডিওতে সুমাইয়া বলেন, “আমার চাচা রেনু মিয়া আমাকে মেরেছে।”

হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রেনু মিয়ার ভাই বেনু মিয়া বাদী হয়ে তিনজন নির্দোষ ব্যক্তির নামে থানায় মামলা করেন। মামলার পর র‌্যাব সদস্যরা আশিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, আশিকসহ অভিযুক্তরা সেদিন কেশবপুর বাজারে বিয়ের কেনাকাটায় ছিলেন, যার প্রমাণও রয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রকৃত ঘটনাস্থলের আশপাশের কাউকে স্বাক্ষী না রেখে রেনু মিয়া নিজ আত্মীয়দের সাক্ষী বানিয়ে সাজানো মামলা করেছেন। তারা দাবি করেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড।

রেনু মিয়া, তার ছেলে ও পুত্রবধূ ঘটনার পর থেকেই পলাতক। প্রশ্ন উঠেছে—নির্দোষ হলে কেন তারা পালিয়ে আছেন?

মসজিদের ইমাম আলী আহাম্মদ ও পল্লী চিকিৎসক কাউছার জানান, তারা সুমাইয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান এবং তার মুখে রেনু মিয়ার নাম শুনেছেন। এমনকি রেনু মিয়ার স্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, ঘটনার পর স্বামীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং তাকে মারধরের চেষ্টা করেন।

অভিযুক্ত আশিক মিয়ার ভাই হারুন মিয়া জানান, “রেনু মিয়ার সঙ্গে আমাদের পুরোনো বিরোধ ছিল। সেই মামলার রায় সামনে, তাই প্রতিশোধ নিতে এই নির্মম কাণ্ড ঘটানো হয়েছে।”

এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নিরীহদের হয়রানি না করে প্রকৃত খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

মাধবপুর থানার ওসি সাহিদুল্লাহ জানান, “মামলাটি তদন্তাধীন। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

এলাকাবাসী দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে রেনু মিয়াকে গ্রেপ্তার এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন কেউ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে পার পেতে না পারে এবং সুমাইয়ার হত্যার সঠিক বিচার নিশ্চিত হয়।



banner close
banner close