রবিবার

২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৬ পৌষ, ১৪৩২

ভূঞাপুরে বিদ্যুৎ প্রকল্পে অনিয়ম: বাঁশের খুঁটি-ফাটা তারে ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই, ২০২৫ ১৪:২৩

শেয়ার

ভূঞাপুরে বিদ্যুৎ প্রকল্পে অনিয়ম: বাঁশের খুঁটি-ফাটা তারে ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ
ছবি বাংলা এডিশন

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ ও লাইনের সংস্কারের নামে কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও সাব-ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। উপজেলার বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের আওতাধীন ঘাটাইল পশ্চিমাঞ্চল ফিডারের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও বাঁশের খুঁটি, কোথাও আবার ফাটা তারে ঝুলছে সংযোগ। সামান্য বাতাসেই খুঁটি উপড়ে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে, ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, সেবা পেতে বিদ্যুৎ অফিস ও ঠিকাদারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ ছাড়া মিলছে না সংযোগ বা মেরামত। “যার ঘুষ বেশি, তার কাজ আগে”— এমন দুর্নীতিপূর্ণ চর্চায় ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা।

তথ্য অনুযায়ী, ঘাটাইল ফিডারের যোগিহাটি থেকে বাইশকাইল কবরস্থান পর্যন্ত মাত্র ১২টি এলটি খুঁটি বসাতে ২ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। মজনু মিয়ার বাড়ির সংযোগে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কাগমারিপাড়া থেকে যোগিহাটি পর্যন্ত লাইনে ৪ লাখ ৫০ হাজার এবং একটি মাত্র খুঁটি বসিয়ে সংযোগ নিতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

এই অনিয়ম একক কোনো এলাকার নয়; ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায়ই একই চিত্র বিরাজমান। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়েই ঠিকাদাররা কোটি টাকার বেশি ঘুষ আদায় করেছেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশের অভিযোগও রয়েছে।

২০২২ সালের অক্টোবরে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পর জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) পরিচালিত এক সমীক্ষার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ গ্রিড স্থিতিশীল রাখতে সরকার বড় পরিসরের প্রকল্প হাতে নেয়। সেই প্রকল্পে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসও অন্তর্ভুক্ত হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ভূঞাপুর এলাকায় লাইন সংস্কার, নতুন সংযোগ, ওভারলোড নিরসন এবং উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় ‘পার্টনার কনস্ট্রাকশন’ ও ‘উত্তরা এন্টারপ্রাইজ’ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন নয়ন ও শিপন নামে দু’জন। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও অর্ধেক কাজও এখনো শেষ হয়নি। অনেক স্থানে খুঁটি বসানো হলেও নেই তার, আবার কোথাও তার রয়েছে কিন্তু সংযোগ নেই— এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে— পুরাতন ও নতুন তার বিক্রি, এমএস ও কংক্রিটের খুঁটি ভেঙে রড বিক্রি, গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ আদায়সহ নানা অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিদ্যুৎ অফিস কর্মী জানান, ঠিকাদার নয়ন ও প্রকৌশলী মিলনের সঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেন হয় নিয়মিত।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-ঠিকাদার নয়ন বলেন, “শ্রমিকদের নাস্তা বাবদ সামান্য টাকা নেওয়া হয়, এটা ঘুষ নয়।” পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন ট্যান্সমিটারও ঘুষ ছাড়া দেয় না।”

সম্প্রতি আবারও এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে ঠিকাদার নয়নকে। অভিযোগ উঠেছে, নতুন সংযোগ দিতে গিয়ে পুনরায় ঘুষের দরকষাকষিতে লিপ্ত তিনি। এতে গ্রাহকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ আগেই টাকা দেওয়ার পরও সংযোগ পাননি বলে অভিযোগ করছেন।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, “প্রকল্প চলাকালীন সময়ে আমাদের অফিসে কোনো বরাদ্দ থাকে না। ফলে গ্রাহকদের সরাসরি সেবা দিতে পারি না, এতে তারাই আমাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন।”

জাইকা প্রকল্পের (ময়মনসিংহ জোন-২) দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক সিফাতীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।



banner close
banner close