চুয়াডাঙ্গায় আউশ মৌসুমের ভরা সময়ে দেখা দিয়েছে তীব্র সারসংকট। জেলার চারটি উপজেলায় সরকারি ডিলার পয়েন্টগুলোতে ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি সারের সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ খুচরা বাজারে এসব সার মিলছে চড়া দামে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিলারদের কাছ থেকে তারা প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার পাচ্ছেন না। অথচ বাজারে খুচরা পর্যায়ে পর্যাপ্ত সার পাওয়া যাচ্ছে, যার দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ বেশি। এতে করে তারা একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছেন, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও চাপে পড়ছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পীরপুর গ্রামের কৃষক মিনারুল ইসলাম জানান, তিনি ছয় বিঘা জমিতে চাষাবাদ করছেন। প্রতিটি বিঘায় তার প্রয়োজন ৩০ কেজি করে সার হলেও ডিলারের কাছ থেকে পাচ্ছেন মাত্র ১০ কেজি।
তিনি বলেন, ‘আইডি কার্ড দেখিয়ে সার নিতে হচ্ছে। অথচ চাহিদার এক-তৃতীয়াংশও মিলছে না।’
হিরণ আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘ডিলারের দোকানে গেলে বলা হয় সার নেই। কিন্তু পাশের খুচরা দোকানেই সব পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম ১৩৫০ টাকার জায়গায় ২৩০০ টাকা। বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে।’
দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রতি বছরই মৌসুমের শুরুতে এই সংকট দেখা দেয়। একটি সংগঠিত সিন্ডিকেট এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
এ অবস্থার বিষয়ে ভালাইপুর বাজারের বিসিআইসি ডিলার রানা বিশ্বাস বলেন, ‘নন-ইউরিয়া সারের সরবরাহ কম। আমরা যা পাচ্ছি, তা কৃষকদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছি।’
অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জেলার বাইরে থেকে সার সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ যোগ হওয়ায় দাম বাড়ছে।’
সারসংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘সরকার কৃষকদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে সার সরবরাহ করছে। কোথাও যদি সিন্ডিকেট করে কারসাজি করা হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৯৪ হাজার ২০ হেক্টর। চলতি আউশ মৌসুমে সার চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার মেট্রিক টন। সার বিতরণে জেলার চারটি উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ৫০ জন ও বিএডিসি অনুমোদিত ৯৩ জন ডিলার রয়েছে।
তবে মাঠপর্যায়ে কৃষকেরা অভিযোগ করছেন, এই ডিলারদের অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করছেন না। ফলে বাধ্য হয়েই চড়া দামে খুচরা বাজার থেকে সার সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা দ্রুত সার সরবরাহ স্বাভাবিক করা এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে আউশ মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:








