রবিবার

২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৬ পৌষ, ১৪৩২

ধর্ষণচেষ্টা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে শিহাবকে, অভিযোগ পরিবারের

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০ জুলাই, ২০২৫ ২০:৩৭

শেয়ার

ধর্ষণচেষ্টা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে শিহাবকে, অভিযোগ পরিবারের
ছবি বাংলা এডিশন

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর শহরের নতুন তেতুলিয়ার শিহাব আহমেদকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার। শুধু তাই নয় বাংলা এডিশনের অনুসন্ধ্যানে যে তথ্য উঠে এসেছে তার সঙ্গে থানায় দেয়া অভিযোগ পত্রের রয়েছে বিস্তর তফাৎ।

এর আগে গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় একই এলাকার শাহানাজ খাতুন নিজের ৭ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে সিহাবসহ অজ্ঞাত আরও দুইজনকে আসামী করে থানায় মামলা করেন।

ওই রাতেই সিহাবকে নিজ রাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে জীবননগর থানা পুলিশ। এ মামলায় শিহাব জেল হাজতে রয়েছেন। এদিকে পুলিশ বলছে, সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে মামলাটি।

মামলার অভিযোগে শাহানাজ খাতুন বলেন, গত ৯ জুলাই দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আমার মেয়ে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি আসছিল। এ সময় নতুন তেতুলিয়ার তেমাথায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে তাকে একা পেয়ে বার্গার এবং চিকেন খাওয়ানোর লোভ দেখায় সিহাবসহ অজ্ঞাত দুইজন।

তারপর শিহাব ও তার সাথে থাকা আরও দুজন মোটরসাইকেলে আমার মেয়েকে নিয়ে "দি রয়েল ক্যাফেতে" যায়। সেখানে আমার মেয়েকে বার্গার, চিকেন খাওয়ানো শেষ করে মোটরসাইকেলে বাঁকা রোডে নিয়ে যায়।

পরে শিহাব আমার মেয়েকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে বাঁকা গ্রামের ফাঁকা মাঠের মধ্যে খোকন মাস্টারের পরিত্যক্ত ঘরের মধ্যে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে।পরবর্তীতে শিহাব ও তার সঙ্গীরা মোটরসাইকেলে করে আমার মেয়েকে নতুন তেতুলিয়া মসজিদের পার্শ্বে রেখে চলে যায়।

বাংলা এডিশনকে একটি সুত্র জানিয়েছে- ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে গত ১২ জুলাই শিহাব ও তার রফিকুল ইসলামকে বাদীর আত্মীয়-স্বজন মারধর করেন। শিহাবকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেধে রেখেছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী শালিস বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের অনেক লোকজন। বাদি পক্ষ উপযুক্ত প্রমাণ দিতে না পারায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হপ্যে যায়। কিন্তু কেন আবার মামলা হলো তা বোধগম্য নয়।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিহাবের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, শিহাবের নামে যে ধর্ষণচেষ্টার মামলা দেওয়া হয়েছে সেটা মিথ্যা। বরং মামলার বাদির পরিবারের লোকজন আমাকে ও আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে পিটিয়েছে। ওরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নিজেদের বাচাতে এখন ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, এখান থেকে বিজিবি চেকপোস্ট মাত্র ১০০/১৫০ গজ দূরে। তাছাড়া দিনটি জীবননগর সাপ্তাহিক হাটের দিন। এ কারণে সব সময় কমবেশি রাস্তায় মানুশ ছিলো। এলাকার সবাই মেয়েটিকে চেনে। তিনজন মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে গেলো অথচ কারোর চোখে পড়ল না ঘটনাটি। বিষয়টি সন্দেহ জনক। সুষ্টু তদন্ত করলেই মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

শালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকা একব্যাক্তি বলেন, মামলার পর তারা এজাহারে যে রেস্টুরেন্টে ওই মেয়েকে চিকেন ও বার্গার খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সেদিন শিহাবসহ তার বন্ধুরা সেখানে যায়নি। এছাড়া যে সড়কের কথা বলা হয়েছে, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

শিহাবের চাচা তারিকুল ইসলাম বলেন, বাদীর পরিবার মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার ভাই ও ভাতিজাকে অহেতুক পিটিয়েছে। এই ঘটনা আড়াল করতেই ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দিয়েছে সিহাবকে। সাংবাদিক, পুলিশ প্রশাসনকে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করার আহ্বান জানাচ্ছি। তাহলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শালিশ বৈঠককারী ও একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব উদ্দীন বলেন, মেয়েটির পরিবার থেকে আমাকে ডাকা হয় ১৩ জুলাই সন্ধায়। আমি উপস্থিত হয়ে বিষয়টি শুনি। যেহেতু আমি দুই মেয়াদে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছি সেহেতু নারী নির্যাতন বা অপহরণ আইন বিষয়ে আবগত আছি। তাই আমি তাদের প্রস্তাব দিই আইনগত ব্যবস্থা নিতে। তবে পরিবারের লোকজন জানায় থানা পুলিশ না করে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধান করার।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে আমি মেয়েটির কথা শুনেছি। তখন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, স্থানীয় বিএনপিসহ এলাকার কয়েকশ মানুষ উপস্থিত ছিলো। মেয়েটির সঙ্গ্র কি হয়েছে তা পরিস্কার ভাবে কিছু বলতে পারছিলো না। শুধু শিহাবের নাম করে সে। রেস্টুরেন্টে চিকেন খাওয়ার কথা বলে। আমি ওই রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এতে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে নিষ্পত্তি হয়ে যায়।

তথ্য জাচাই-বাচাইয়ের পর বাংলা এডিশন অনুসন্ধানে নামে। এলাকাবাসীর দেয়া সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে রয়েল ক্যাফে এন্ড ফুডপার্কের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচন করা হয় ঘটনার দিন ও তার আগে পরে আরও ৪ দিনের। তাতেকরে সিহাবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রমাণ পায়নি বাংলা এডিশন।

কথা হয় রেস্টুরেন্ট কতৃপক্ষের সাথে। তারা জানান, ছেলেটিকে তাদের কর্মচারীরা ওই দিন সেখানে প্রবেশ করতে দেখনেনি। এমনকি ঘটনার আগেও দেখেনি। ভুক্তভোগী পরিবার ছাড়াও পুলিশ সদস্যরা ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমাদের এখানে এসেছিল। সিসি ফুটেজে দেখেছেন, এমন কোনো তথ্য পাননি ওনারা। এমনকি রেস্টুরেন্টের সামনের রাস্তায়ও তাদের আসা-যাওয়ার কোনো ফুটেজও ধরা পড়েনি ক্যামেরায়। মেয়েটি যেই টেবিলের কথা বলেছে সেই টেবিলেও একটি ক্যামেরা ছিল, সেই ক্যামেরায়ও তাদের দেখা যায়নি।

এর আগে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে তাদের বাড়িতে গেলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কেওই। তবে স্বল্প সময়ে থানায় দেয়া অভিযোগের বর্ণণা দেয় মেয়েটি। প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে স্বজনদের দিকে তাকিয়ে তাদের শেখানো উত্তর দেয়। পাশ থেকে শিখিয়ে দেয়া কথাই বলতে থাকে মেয়েটি।

এক পর্যায়ে ধর্ষণ চেষ্টা মামলার বাদী শাহানাজ খাতুন কথা বলতে রাজি হন বাংলা এডিশনের সঙ্গে। বক্তব্য রেকর্ড করার এক পর্যায়ে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করলে তাতে বাধসাধেন মেয়েটির চাচা। বাদিকে তিনি আমাদের প্রশ্নের উত্তর শিখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। সঠিক তথ্য উদঘাটনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করলে তার উত্তর না দিয়ে বাধা সৃষ্টি করা হয়। শুধু বাদীর কথা শুনতে চাই এমন কথা বললে, তোপের মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে সেখান থেকে ফিরে আসতে হয়।

মামলার বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, অভিযোগ দেয়ার পরেই ওই শিশুকে আমরা থানায় আনি। আমাদের লেডি অফিসার দিয়ে তার কথা শুনি। তারপর ক্রসচেক করতে আমিও তার কথা শুনি।

তিনি বলেন, এরপর ধর্ষণের চেষ্টার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয় মেয়েটির মা। এরপর আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে শিহাবকে আটক করি। গ্রেফতারকৃতকে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদ করেছি। শিহাবকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

জীবননগর থানার এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমাদেত এসপি মহোদয় এসেছিলেন। উনিও মেয়েটির বক্তব্য শুনেছেন। ওই মাদ্রাসাছাত্রী ঘটনার বিষয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।



banner close
banner close