মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে বসতবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিক থেকে উজানের পানির প্রবল ঢলে নদীটি নতুন করে ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। এতে উপজেলার চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী বহু এলাকা ভাঙনের মুখে পড়েছে।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার একর ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরেই নদী ভাঙনের কবলে। এর মধ্যে আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন এক সময় সম্পূর্ণ নদীগর্ভে চলে যায়। পরবর্তীতে চর জেগে উঠলে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে সেখানে পুনরায় জনবসতি গড়ে ওঠে।
উপজেলার আরেক ভাঙনকবলিত ইউনিয়ন কাঞ্চনপুর। এ ইউনিয়নের ১৩টি মৌজার মধ্যে ১২টিই ইতোমধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে প্রায় ১২টি গ্রাম পুরোপুরি নদীতে হারিয়েছে।
চলতি বর্ষার শুরুতেই নদীতে জোয়ারের পানি আসার পর কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। পূর্বে ফেলা আপদকালীন জিও ব্যাগও অনেক জায়গায় নদীতে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কুশিয়ারচর এলাকায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। তবে পাশের মালুচি গ্রামে এখনো কোনো জিও ব্যাগ না পড়ায় সেখানে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কলাবাগানসহ ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, হুমকির মুখে রয়েছে প্রায় ২০টি বসতবাড়ি।
ভাঙনরোধে শনিবার (১৯ জুলাই) সকালে মালুচি গ্রামে স্থানীয়দের উদ্যোগে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা মালুচি গ্রামের প্রায় ৭০০ মিটার এলাকাজুড়ে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের দাবি জানান।
গণসমাবেশে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, “ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোতে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বসতভিটা ও কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা চাই।”
স্থানীয় প্রবাসী আব্দুর রহমান বলেন, “কুশিয়ারচরে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও মালুচি গ্রামে তা হয়নি। এতে আমাদের এলাকা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
মালুচি গ্রামের বাসিন্দা হাফেজা বেগম বলেন, “তিনবার নদীতে বাড়ি গেছে। এখন ভাইয়ের দেওয়া জায়গায় থাকি। এটাও নদীর কিনারে। যেকোনো সময় হারিয়ে যাবে। যদি এটাও চলে যায়, তাহলে আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে না।”
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, “কালিতলা থেকে মালুচি পর্যন্ত ৩০০ মিটার এলাকায় আপদকালীন জিও ব্যাগ ডাম্পিং সম্পন্ন হয়েছে। বাকি অংশে প্রকল্প প্রণয়নের লক্ষ্যে জরিপ শেষ হয়েছে এবং স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়া মানুষগুলোর একটাই দাবি—জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তায় দ্রুত কার্যকর ভাঙনরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক।
আরও পড়ুন:








