রবিবার

২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৬ পৌষ, ১৪৩২

ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা: পিবিআই তদন্তে চুয়াডাঙ্গার আকাশ মৃত্যুর রহস্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই, ২০২৫ ২০:৪০

শেয়ার

ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা: পিবিআই তদন্তে চুয়াডাঙ্গার আকাশ মৃত্যুর রহস্য
ছবি বাংলা এডিশন

চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুর এলাকায় ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহকারী গাফফার আলী আকাশকে (২৬)। শুরুতে ঘটনাটি দুর্ঘটনা হিসেবে প্রচারিত হলেও পরিবারের দাবিতে নতুন মোড় নেয় তদন্ত। আদালতের নির্দেশে এখন মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত ১৯ মে রাজশাহী থেকে খুলনাগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে করে অফিস শেষে বাড়ি ফিরছিলেন আকাশ। জয়রামপুর আখ সেন্টারের পাশে রেললাইনের ধারে পড়ে থাকা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন আঞ্চলিক ও জাতীয় গণমাধ্যমে “ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু” হিসেবে খবর প্রকাশিত হয়। তবে পরিবারের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

নিহতের পিতা জিন্নাত আলী ২১ মে চুয়াডাঙ্গা আদালতে ৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন—টিটিই লালন চক্রবর্তী (৪২), রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক পারভেজ (৩৬), কনস্টেবল কাদের (৪০), এটেনডেন্ট মিলন (৩৭) ও সোহাগ মিয়া (৩৬)। তারা সবাই ঘটনার সময় কপোতাক্ষ ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে দায়িত্বে ছিলেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ট্রেনে টিকিটবিহীন যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করেছিলেন আকাশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্তরা তাকে টেনে-হেঁচড়ে দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন। মামলায় ৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী সাক্ষ্য দিয়েছেন। একটি ফোনালাপের রেকর্ডেও ঘটনার বর্ণনা মেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী এক যাত্রী বলেন, “আমি ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে ৭১ নম্বর সিটে ছিলাম। দেখি, লাল গেঞ্জি পরিহিত এক যুবককে দরজার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি সে মাথার নিচে পড়ে যাচ্ছে। দুজন পুলিশ সামনে থাকলেও কিছুই করেনি।”

দুর্ঘটনার দিন আকাশ তার ৯ মাসের সন্তানের জন্য জুস কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। মরদেহের পাশে পড়ে ছিল সেই জুসের প্যাকেট।

আকাশ ছিলেন সেনেরহুদা গ্রামের বাসিন্দা। একমাত্র সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার পরিবার। আকাশের মা তাহমিনা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে প্রতিবাদী ছিল, এজন্যই তাকে হত্যা করা হলো। আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছি।”

স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার রাফি বলেন, “আমার ১১ মাসের সন্তানকে নিয়ে আমি এখন কী করবো? আমার স্বামীই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।”

স্থানীয়রা জানান, আকাশ একজন সৎ, নম্র ও ভদ্র ব্যক্তি ছিলেন। তার হত্যার প্রতিবাদে উথুলী রেলস্টেশনে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আকাশকে মোবাইল চুরির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। সে একজন সরকারি কর্মচারী ছিল, পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে ছাড় দেওয়া হয়নি।”

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস বলেন, “প্রথমে মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশের হাতে থাকলেও পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে পিবিআই দায়িত্ব পেয়েছে। বর্তমানে মামলাটি ঝিনাইদহ পিবিআই তদন্ত করছে। জেলা পুলিশ সবধরনের সহযোগিতা করছে।”

এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। তারা বলেন, “রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”



banner close
banner close