মাত্র ৩২ বছর বয়সেই প্রাণ হারান তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক হাসান মেহেদী। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের সন্তান এই সাহসী সাংবাদিক স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি এবং দুই শিশু কন্যা—তিন বছরের মায়মুনা বিনতে নিশা ও দশ মাসের মেহেরাশকে নিয়ে বসবাস করতেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে।
তিনি ছিলেন অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা টাইমস-এর সিনিয়র রিপোর্টার। এর আগে দেশের বিভিন্ন নামকরা গণমাধ্যমে কাজ করে গড়ে তুলেছিলেন আস্থার একটি নাম। সহকর্মীদের কাছে পরিচিত ছিলেন কর্মঠ, নির্ভীক ও বিশ্বস্ত একজন সাংবাদিক হিসেবে।
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই, সারাদেশে চলমান ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের দিন বিকেলে যাত্রাবাড়ী এলাকায় খবর সংগ্রহে যান মেহেদী। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেখানে শুরু হয় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। উত্তাল পরিস্থিতিতে হঠাৎ পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে ছুড়ে দেওয়া হয় ছররা গুলি।
সাংবাদিক হাসান মেহেদীর হাতে ছিল ক্যামেরা, গলায় সাংবাদিক পরিচয়পত্র। দৌড়ে উড়াল সেতুতে উঠে ছবি তুলতে গেলে তাকেই টার্গেট করে ছোড়া হয় গুলি। শরীরে আঘাত লাগে একাধিক ছররা গুলির। তিনি পরিচয়পত্র দেখিয়ে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন—তিনি সাংবাদিক। কিন্তু ততক্ষণে ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর বুক। রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন সাংবাদিক মেহেদী।
পরে আন্দোলনকারীরা দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। সেখানেই সহকর্মীরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেন।
সাংবাদিকতা করার দায়ে এমন নির্মম মৃত্যুতে স্তব্ধ গোটা পরিবার। পিতা মোশাররফ হোসেন, মাতা মাহমুদা বেগম বারবার প্রশ্ন করেন, “একজন মানুষকে মারতে কতটা গুলি লাগে?” স্ত্রী পপি আজও বিশ্বাস করতে পারেন না, একটি গণতান্ত্রিক দেশে পরিচয়পত্র ঝুলিয়েও একজন সাংবাদিককে এভাবে গুলি করে মারা হতে পারে! দুই শিশুকন্যা এখনো জানে না, কেন তাদের বাবা আর ফিরে আসবেন না।
ঘটনার পর ২৭ জুলাই দায়ের হয় একটি মামলা, যেখানে অভিযুক্ত করা হয় জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের। পরে এক ‘ফুফু’ পরিচয়ে দায়ের করা আরেকটি মামলাও ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আর্থিক সুবিধার আশায়। সরকার পরিবর্তনের পর মেহেদীর বাবা নিজে মামলা করতে চাইলেও আগের মামলা দুটি থাকার কারণে তা গ্রহণ করা হয়নি।
পরে তৎকালীন ডিবি কর্মকর্তার সহযোগিতায় পুরোনো মামলা বাতিল করে যাত্রাবাড়ী থানায় নতুন মামলা করা হয়। তবে শর্ত ছিল—এজাহার থেকে অভিযুক্ত ছয় পুলিশ কর্মকর্তার নাম বাদ দিতে হবে। ফলে এখনো পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম তেমন অগ্রগতি পায়নি। পরিবার চায় শুধুমাত্র একটি জিনিস—ন্যায়বিচার।
আরও পড়ুন:








