নতুন ব্যবস্থাপনায় বদলে গেছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ত¡ লিকার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কো¤পানি। দক্ষ ব্যবস্থাপনা, নতুন নতুন পরিকল্পনা আর কঠোর নজরদারিতে বন্ধ হয়েছে চুরি আর দৌরাত্ম। বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ১২০ কোটি টাকা মুনাফার পথে রয়েছে প্রতিষ্টানটি।
চুরি ঠেকাতে কেরুজ লিকার উৎপাদন কারখানার গেইট দিয়ে ঢুকতে গেলেই তল্লাশি করা হচ্ছে। পুরো ফ্যাক্টরি নেয়া হয়েছে সিসি ক্যামেরায় আওতায়। সতর্ক নিরাপত্তা রক্ষীরাও। ফলে চুরি বন্ধ হয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ব এই প্রতিষ্ঠানটিতে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে গত ২২ মে থেকে নতুনভাবে বোতলজাত করা হয়েছে কেরুর ‘কান্ট্রি লিকার। এ উদ্যোগে এজেন্টদের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠান ই লাভবান হচ্ছে।
এতদিন ড্রামে সরবরাহ হওয়া কান্ট্রি লিকারে পানি মিশিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করতো একটি সিন্ডিকেট। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ধরে রাখতে সরকারের সহযোগীতা চান শ্রমিকরা।
চিনিকলের চিটাগুড় থেকে প্রস্তুত হয় আটটি ব্রান্ডের বিলাতি মদ। পাশাপাশি তৈরি হয় কান্ট্রি লিকার, ডিনেচার্ড ও রেকটিফাইড স্পিরিট, হোয়াইট ও মলটেড ভিনেগার। প্রতিষ্টার পর থেকে হাতের ছোয়ায় ম্যানুয়ালি বোতলে ভরা হতো কেরুর বিলাতি মদ। স¤প্রতি অটোমেশন পদ্ধতির কারণে উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রা্ব্বিক হাসান জানান, সরকারের পরিকল্পনায় আধুনিকায়ন ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে দিনে দিনে উন্নতি করা হবে কেরুর উৎপাদিত পন্যের।
কেরু এন্ড কোম্পানী দেশি-বিদেশি ব্রান্ড্রের লিকার প্রস্তুত করে আসছে ১৯৩৮ সাল থেকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেমন মানে ও সুনামে সমৃদ্ধ হয়েছে, তেমনি প্রতি বছর লাভের রেকর্ড গড়ে চলেছে কেরু। চিনি কারখানা, স্পিরিট ও লিকার উৎপাদন কারখানা, জৈব সার কারখানা, ও বানিজ্যিক খামারের সমন্বয়ে কেরু এ্যান্ড কোং একটি বৃহৎ শিল্প কমপ্লেক্স।
এদিকে কেরুজ কান্ট্রি স্পিরিট বোতলজাত করায় লঙ্কাকান্ড ঘটিয়েছে ভেজালকারীরা। দেশের সর্ববৃহৎ চিনি শিল্প কমপ্লেক্স ও চুয়াডাঙ্গার একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনার কেরু এ্যান্ড কোম্পানী সদ্য বিদায়ী অর্থ বছরে সর্বোচ্চ প্রায় ১২০ কোটি টাকার মুনাফা করতে যাচ্ছে। আর এই লাভের পুরাটাই আসছে সরকারী একমাত্র ডিষ্টিলারী থেকে। কেরুর ডিস্টিলারির সম্মিলিত বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১.৩৫ কোটি প্রুফ লিটার।
কেরু কোম্পানির ডিস্টিলারি ইউনিটে রয়েছে ৯ প্রকারের মদ-ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্রান্ডি, চেরি ব্রাান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম এবং ওল্ড রাম।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানী গত ২২ মে প্রথমবারের মতো দেশী মদ নামে খ্যাত কান্ট্রি স্পিরিট বোতলজাত করে বিপনন শুরু করে। এতে করে এতো দিনে অবৈধ সুবিধাভোগীরা যারা প্রতি ড্রামে দ্বিগুন/তিনগুন পানি মিশিয়ে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের অবৈধ আয়ের উৎসে টান লাগায় এ প্রক্রিয়া বন্ধ করার পায়তারা করছে। পণ্যাগারগুলোর এই অবৈধ অর্থেই চলে কেরু কোম্পানীর রাজকীয় সিবিএ নির্বাচন ও কতিপয় কর্মকর্তা/কর্মচারীর শাহী জীবনযাপন। বর্তমান উদ্যোগ সফল হলে কিছুটা হলেও পণ্যাগারের পোস্টিং নিয়ে অর্থবানিজ্য আর ক্ষমতার দাপট কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে।
রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন ( BNACWC) এর সুপারিশক্রমে শিল্প উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে বোটলিং কার্যক্রম চালু হলেও অভিযোগ রয়েছে, কয়েক মাস আগে বর্তমান প্রশাসন কান্ট্রি স্পিরিট প্লাস্টিক বোতলে ভরে বিক্রির উদ্যোগ নিলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এমপি আলী আজগার টগরের নিয়োগকৃত কতিপয় এজেন্ট সে উদ্যোগ স্থগিত করে দেয়। সিদ্ধান্তে অটল থাকা প্রশাসন সেসব বাধা মাড়িয়ে গত ২২ মে পার্বতীপুর ওয়ার হাউজে প্রথম চালান পরে পর্যায়ক্রমে সকল পণ্যাগারে পূর্বের ড্রাম পদ্ধতির পরিবর্তে বোতলজাত করে সরবরাহ শুরু হয়। এছাড়া ফরেন লিকার বাজারে চাহিদার প্রেক্ষিতে বিক্রয়ের তারতম্য হলেও মুনাফা বেশী হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- আওয়ামী রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত কোটি কোটি টাকার মালিক কয়েকজন এজেন্ট এবং কর্মচারীকে সম্প্রতি সময়ে করপোরেশন কেরু থেকে অন্যত্র বদলী করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে স্থানীয় ও কিছু জাতীয় পত্রিকায় একই ড্রাফটে লেখা ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে প্রকাশ করে যাচ্ছে।
কেরুতে বিদায়ী অর্থ বছরে ডিস্টিলারীতে রিকোভারী বৃদ্ধি, ভিনেগারের বিক্রয় বৃদ্ধি, চিনির রিকোভারী বৃদ্ধি, জৈব সারের উৎপাদন বৃদ্ধি, আখের রোপন বৃদ্ধি পেলেও আওয়ামী সিন্ডিকেটটি জেলার একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প কমপ্লেক্সটির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
আরও পড়ুন:








