কুষ্টিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ড্রেজার বিভাগে কোটি টাকার জ্বালানি তেল আত্মসাতের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গড়াই নদ খনন প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে এই অভিযান পরিচালনা করে দুদকের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল। তিনি জানান, প্রকল্পে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন বন্ধ থাকলেও কাগজপত্রে তা সচল দেখিয়ে জ্বালানি তেলের বিল অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে সরকারি অর্থের অপব্যবহার ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। অভিযানের সময় সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ও আলামত সংগ্রহ করা হয়।
নীল কমল পাল আরও বলেন, “বিল ও ভাউচার যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করা হবে। তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মন্ডল ফিলিং স্টেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তেলের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত শেষে দুদক কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”
প্রকল্পের পটভূমি ও খরচ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদ পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (চতুর্থ পর্যায়) আওতায় হরিপুর সংযোগ সেতু থেকে বোরালিয়া ঘাট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার নদীপথ খননের কাজ বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের জ্বালানি তেল সরবরাহ করে কুষ্টিয়ার মন্ডল ফিলিং স্টেশন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষামূলকভাবে গড়াই নদ খননের সূচনা করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। যদিও শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীর পানিপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় গড়াই নদ পুনরায় বালু জমে মরাখালে পরিণত হয়। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, পানি ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ৯৪২ কোটি টাকার ব্যয়ে গড়াই নদ পুনরুদ্ধার প্রকল্প-২ হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পে দুটি ড্রেজার মেশিন কেনা হলেও হস্তান্তরের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে অপসারণ করা হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে ১৬ কিলোমিটার নদীপথে আরও প্রায় ৪০ কোটি টাকার খনন কাজ সম্পন্ন হয়।
অভিযোগ অস্বীকার ও নীরবতা
তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক আক্তার মন্ডল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাকে যেখানেই তেল পৌঁছাতে বলা হয়, আমি সেখানে সরবরাহ করি। প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”
তবে অভিযানের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত বিশ্বাস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গড়াই প্রকল্পের জাতীয় গুরুত্ব
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার কৃষি, নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গড়াই নদ পুনরুদ্ধার প্রকল্পকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও টেকসই ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আরও পড়ুন:








