চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় একের পর এক চুরি, দুর্ঘটনা, হত্যাকাণ্ড এবং মাদক বিস্তারের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। নাগরিকরা মনে করছেন, সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, আর প্রশাসনের নিরবতা জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
ক্রমবর্ধমান চুরির ঘটনা
৭ জুলাই রাতে বাদামতলী বাজারে ‘ইকবাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে’ চুরির ঘটনায় দেড় লাখ টাকার মালামাল লুট হয়। দোকান মালিক হাফেজ ইকবাল হোসেন নিঃস্ব হয়ে পড়েন। একই রাতে বড়তলা এলাকায় একটি জামে মসজিদের ব্যাটারি ও একটি দোকানের মালামালও চুরি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের টহল কার্যত অদৃশ্য এবং অভিযোগ জানালেও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
সড়কে প্রাণহানি ও সিএনজির দাপট
৭ জুলাই পৌরসদরের কলেজ রোডের মুখে মহাসড়কে একটি চলন্ত লরির ধাক্কায় মারা যায় ৫ বছরের শিশু আলিফা। শিশুটি হাইতকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা। স্থানীয়দের অভিযোগ, মহাসড়কে অবৈধ সিএনজি চলাচল দিনদিন বাড়ছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই।
পারিবারিক হত্যাকাণ্ড ও পর্যটক মৃত্যুও আতঙ্ক বাড়ায়
একই দিনে মধ্যম তালবাড়িয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাগিনার ছুরিকাঘাতে খুন হন মামা হারুন অর রশিদ। অভিযুক্ত এখনও পলাতক।
সোনাপাহাড় এলাকার নিষিদ্ধ মেলখুম ট্রেইলে পাহাড় থেকে পড়ে মারা যান দুই বন্ধু গালিব ও রিদয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না, প্রশাসন কেবল নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দায় সারছে।
মাদক কারবার রীতিমতো মহামারী
টেকনাফ ও ভারত সীমান্ত থেকে মাদক—ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল ও চোলাই মদ—মিরসরাইয়ে সহজে প্রবেশ করছে। যদিও মাঝে মাঝে অভিযান হয়, তবে উপজেলায় ছড়িয়ে থাকা মাদক কারবারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকাগুলোতেও মাদকের প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
প্রশাসনের বক্তব্য
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মামুন জানান, মহাসড়কে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে, সিএনজি আটক ও মামলা হচ্ছে, এবং আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মিরসরাই থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, “পারিবারিক হত্যাকাণ্ড তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় ঘটেছে। আমরা খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করেছি, গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের ধারাবাহিক অভিযান চলছে, গতকালও ৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ একজনকে ধরা হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার বলেন, “মাদকের তথ্য পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে শিগগিরই মিটিং করব। মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি রয়েছে। মেলখুম ট্রেইল বন বিভাগের আওতায়, এ বিষয়ে তাদের সাথে সমন্বয় করবো।”
নাগরিকদের উদ্বেগ
স্থানীয়দের প্রশ্ন—শান্তিপূর্ণ মিরসরাই হঠাৎ করে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠল কেন? প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বকেও সক্রিয় হয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন:








