সোমবার

২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৭ পৌষ, ১৪৩২

১৫ বছর ধরে ১৫০০ টাকার চাকরি,অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন পার করছেন সুফিয়া খাতুন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ৯ জুলাই, ২০২৫ ০৯:৪৯

আপডেট: ৯ জুলাই, ২০২৫ ০৯:৫০

শেয়ার

১৫ বছর ধরে ১৫০০ টাকার চাকরি,অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন পার করছেন সুফিয়া খাতুন
ছবি বাংলা এডিশন

১৫ বছর ধরে প্রতিদিন সকাল-বিকেল ঝাড়ু হাতে কাজ করে যাচ্ছেন সুফিয়া খাতুন। কর্মস্থল কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়াম। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তার মাসিক বেতন বাড়েনি এক টাকাও—রয়ে গেছে ১৫ বছর আগের ১৫০০ টাকাতেই। এই সামান্য আয়ে চলে না তার সাত সদস্যের পরিবারের নুন-ভাতও। ফলে তিনি ও তার অসুস্থ ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতিপুতিরা দিন পার করছেন অনাহারে-অর্ধাহারে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুফিয়া খাতুন বলেন, “১৫ বছর আগে চাকরি শুরু করছি, তখন বেতন ছিল ১৫০০ টাকা, এখনও সেই টাকা পাই। এই টাকায় সংসার চলে না। ছেলের ভাল্ব আর কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। নাতিপুতিরা স্কুলে পড়ে, কিন্তু খাতা-কলম কেনার মতো সামর্থ্য নেই।”

সুফিয়া খাতুনের স্বামী ২৫ বছর আগে মারা গেছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেটি আগে ভ্যান চালাতেন, কিন্তু অসুস্থতার কারণে এখন কোনো কাজ করতে পারেন না। তার চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে, আর সম্পূর্ণ চিকিৎসার জন্য দরকার ১০ লাখ টাকা।

অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে সুফিয়া বলেন, “সব বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি। এখন কিছুই নেই। কার্ড চাইলে কেউ দেয় না, সাহায্য চাইলে কেউ সাড়া দেয় না।”

প্রতিবেশীরা জানান, সুফিয়া খাতুন একজন পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল নারী। অল্প টাকায় কাজ করে গেলেও কখনও কারো কাছে অভিযোগ করেননি। এখন বয়স ও বাস্তবতার চাপে তার জীবন কাটছে চরম কষ্টে।

মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগারের কেয়ারটেকার সৈয়দা আশেকুন নাহার বলেন, “সুফিয়া খাতুন খুব কষ্টে আছেন। তার ছেলেটিও অসুস্থ। সংসার চালানো তো দূরের কথা, চিকিৎসা করানোর ক্ষমতাও তাদের নেই। সরকার বা সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

বিষয়টি জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্রী বলেন, “সুফিয়া খাতুনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। আগামী মাস থেকেই তার বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



banner close
banner close