মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কয়েকজন শিক্ষার্থী গ্রহণ করেছেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ‘প্রজেক্ট লাইফলাইন গাজা’ নামের এ কর্মসূচির আওতায় গাজার ২০০টি পরিবারে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে খাদ্যসামগ্রী।
গত শনিবার বিতরণ করা এসব খাদ্যপ্যাকেট গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানরত অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছানো হয়, যারা উত্তরের বাইত হানুন অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই মানবিক উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সদস্যরা। প্রজেক্টের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আটজন শিক্ষার্থী—প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের নওশীন নাওয়ার জয়া ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের আম্মার বিন আসাদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জুনায়েদ মাসুদ, ইংরেজি বিভাগের তানজিলা সুলতানা তানি, সিফাত হাসান সাকিব ও উম্মে হাবিবা এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ওমর ফারুক শ্রাবণ।
প্রজেক্ট পরিচালনায় থাকা শিক্ষার্থী আম্মার বিন আসাদ বলেন, ‘আমরা মাত্র কয়েকজন আন্তরিক মানুষের অংশগ্রহণে খুবই সীমিত পরিসরে এই উদ্যোগ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার সফলতাই আমাদের ভবিষ্যতের বড় যাত্রার সূচনা। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র খাদ্য সহায়তা নয়; বরং ইসরায়েলি আগ্রাসন ও পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার বিরুদ্ধে একটি জোরালো আন্তর্জাতিক অবস্থান তৈরি করাও আমাদের উদ্দেশ্য।’
প্রাণরসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন নাওয়ার জয়া বলেন, ‘গাজা আজ মানবতার এক কঠিন প্রশ্ন। প্রতিনিয়ত যে নির্মমতা সেখানে ঘটছে, তার বিপরীতে মানুষ হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই অনুভব থেকেই ‘প্রজেক্ট লাইফলাইন গাজা’-এর সূচনা। আমরা প্রথম ধাপে ২,২৬০ ডলার সংগ্রহ করে ২০০টি পরিবারে খাদ্য পৌঁছাতে পেরেছি। গাজার শিশুদের হাতে সামান্য খাদ্য পৌঁছানো ও সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখতে পাওয়ার অনুভূতি সত্যিই পরম প্রাপ্তি।’
প্রজেক্টের আরেক সংগঠক, হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, ‘এই প্রচেষ্টার অংশ হতে পারা আমাদের মানবিক, নৈতিক ও বৈশ্বিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।’
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক শ্রাবণ বলেন, ‘গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে সংকটাপন্ন মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্র। এ অবস্থায় কিছু করাটা আমাদের কাছে শুধু স্বেচ্ছাসেবা নয়, বরং একটি নৈতিক দায়িত্ব। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ১০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা, তবে আমরা প্রায় ৩ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে প্রথম ধাপে খাদ্য সহায়তা পাঠাতে পেরেছি। এখন আমরা দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ কাম্য।’
উল্লেখ্য, ‘Project Lifeline Gaza’ একটি স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র-যুবকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য গাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ আরও বৃহৎ পরিসরে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করছে।
আরও পড়ুন:








