লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আগেই ফাঁস, অনুপস্থিত প্রার্থীও উত্তীর্ণ, ফল প্রকাশের পর তা পরিবর্তন এবং ভাইভা বোর্ডে নামের পরিবর্তনসহ নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে চুয়াডাঙ্গায় স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ পরীক্ষায়।
এসব ঘটনায় পুরো পরীক্ষা প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে গভীর সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাকরি প্রার্থীরা। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. হাদি জিয়াউদ্দীন।
তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ জুন জেলার ১৯টি কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সহকারী পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৩৯টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করেছিলেন ১৩ হাজার ৬৬৮ জন, তবে পরীক্ষায় অংশ নেন ৪ হাজার ৮৭৪ জন।
দুই দিন পর অর্থাৎ ২২ জুন সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরদিনই প্রকাশিত হয় সংশোধিত ফলাফল, যেখানে কিছু অনুপস্থিত প্রার্থীর উত্তীর্ণ হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এই সাথে আরও অভিযোগ ওঠে পরীক্ষা কেন্দ্র ও অসন বিন্যাস পরিবর্তনের। বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হয় এসএমেসের মাধ্যমে কেন্দ্র পরিবর্তনের তথ্য জানিয়ে। এছাড়া এক প্রার্থীকে একান্তে ভাইবা নেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়।
জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও চাকরি প্রার্থী মেহেদী হাসান মুন্না জানান, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভাইভা বোর্ডে গিয়ে দেখি, আমার জায়গায় অন্য একজনের নাম ঢোকানো হয়েছে।
তার মতো অভিজ্ঞতা আরও অনেক প্রার্থীর। অভিযোগ আছে, পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ও উত্তর ফাঁস হয়ে যায় এবং সেগুলোর সঙ্গে আসল প্রশ্ন মিলে যায়।
সরোজগঞ্জ কেন্দ্রের এক পরীক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার সামনে-পেছনে যেসব প্রার্থী ছিলেন, তারা কেউই পরীক্ষায় অংশ নেননি। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায় তারা উত্তীর্ণ! এটা কিভাবে সম্ভব।
চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, যে প্রক্রিয়ায়া স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে তা বাতিল করতে হবে।সেই সাথে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন ও পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, এই নিয়োগে সুষ্ঠু তদন্ত ও জবাবদিহি না হলে ভবিষ্যতে অনিয়মের সংস্কৃতি আরও গভীর হবে। একইসাথে মেধাবীরা প্রতিবারই অবিচারের শিকার হবেন।
একটি সুত্র মারফত জানা গেছে, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ৩৯ জন প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাতিল করা হয়। অভিযোগকারীদের মতে, এর পেছনেও আছে রহস্য।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদি জিয়াউদ্দীন বলেন, এই পরীক্ষা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম বা প্রশ্নফাঁস হয়নি।
তিনি বলেন, পাঁচ সদস্যের একটি নিয়োগ বোর্ডের অধীনে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সহকারী সচিব, পিএসসির প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং তিনি নিজে।
উল্লেখ্য, এর আগেও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদি জিয়াউদ্দীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সাতটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগেও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়।
আরও পড়ুন:








