সোমবার

২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৭ পৌষ, ১৪৩২

সিন্ডিকেটে টিএসপি সঙ্কট: সরকারি গুদামে সারের পাহাড়, মাঠে হাহাকার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩ জুলাই, ২০২৫ ১৬:২৩

শেয়ার

সিন্ডিকেটে টিএসপি সঙ্কট: সরকারি গুদামে সারের পাহাড়, মাঠে হাহাকার
ছবি বাংলা এডিশন

চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমাণ টিএসপি সার মজুদ রয়েছে কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিএডিসির গুদামে। মজুদের পরিমাণ এত বেশি যে, ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ সার রাখা হয়েছে বিভিন্ন গুদামে। অথচ গত পাঁচ মাস ধরে মাঠ পর্যায়ে এই সার বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে চলতি আমন মৌসুমে কৃষকদের মধ্যে তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাজারে সরকারি দামের দ্বিগুণেও টিএসপি সার মিলছে না।

গুদামে সার পড়ে থাকলেও বরাদ্দ না দেওয়ায় তা বিতরণ করা যাচ্ছে না। এতে যেমন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সঠিক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে মজুদকৃত সার নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিএডিসি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, গুদামে সারের মজুদ পর্যাপ্ত। কুষ্টিয়া আঞ্চলিক অফিসে যেখানে ধারণক্ষমতা মাত্র ২ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে মজুদ আছে ৫ হাজার ৬২ মেট্রিক টন সার, যার মধ্যে ২ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন টিএসপি। চুয়াডাঙ্গা গুদামেও একই অবস্থা; ধারণক্ষমতা ২ হাজার মেট্রিক টন হলেও মজুদ ৮ হাজার ৩৩৬ মেট্রিক টন। নতুন করে আসা দুই জাহাজের সার নেওয়ারও জায়গা নেই।

ডিলাররা অভিযোগ করছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও বিসিআইসির কিছু ডিলার সিন্ডিকেট গড়ে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। সরকারি বরাদ্দ আটকে রেখে কেবল বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত ও দেশীয় উৎপাদিত টিএসপি সার বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সুযোগে সিন্ডিকেট অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে, যা কৃষকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

ফখরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সভাপতি, কুষ্টিয়া বিএডিসি সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশন বলেন, "ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এক কেজি টিএসপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অথচ গুদামে জায়গা নেই। সরকারি সারের গুদাম ভর্তি, কিন্তু কৃষক পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।"

সরকারি দামের তুলনায় দ্বিগুণ দামে টিএসপি সার বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। ৫০ কেজির বস্তার সরকারি মূল্য ১,২৫০ টাকা হলেও বাংলাদেশি টিএসপি ২,৬০০ টাকায়, তিউনিশিয়ার ১,৯৫০ ও মরক্কোর টিএসপি ১,৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিষয়টি অস্বীকার করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং শাখার যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান বলেছেন, “বিএডিসির সার বরাদ্দ বন্ধ নেই। পুরাতন সার আগে বরাদ্দ দেওয়া হয়, নতুন সার পরে বরাদ্দ দেওয়া হবে। দেশে সারের কোনো ঘাটতি নেই।”

তবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বরাদ্দ না থাকায় তারা ডিলারদের মাঝে টিএসপি সার দিতে পারছেন না।

কৃষকেরা বলছেন, আমনের ভরা মৌসুমে সার সঙ্কটে তারা পড়েছেন বিপাকে। অথচ গুদামে সার পাহাড় হয়ে পড়ে আছে।

এই সঙ্কট নিরসনে দ্রুত টিএসপি সার বরাদ্দ দিয়ে মাঠ পর্যায়ে বিতরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন কৃষক ও ডিলাররা। অন্যথায় আগামী মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।



banner close
banner close