সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বালসাবাড়ি বাজারে অবস্থিত ‘রূপসী বাংলা পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে হঠাৎ করে অফিস বন্ধ করে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সঞ্চয় ও ঋণের মাধ্যমে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছিল প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সমিতির কার্যালয় তালাবদ্ধ, কর্মকর্তারা পলাতক, আর প্রতারণার শিকার শতাধিক গ্রাহক পথে বসেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সমিতির পক্ষ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তিতে টাকা জমা দিলে মোটা অঙ্কের মুনাফার আশ্বাস দেওয়া হতো। শুরুতে কিছু গ্রাহককে নামমাত্র লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সময়ক্ষেপণ ও তালবাহানার পর এক রাতে অফিসে তালা ঝুলিয়ে গা ঢাকা দেয় সমিতির পরিচালকরা।
বালাসাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রুবেল জানান, “আমি প্রায় ১০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। প্রতি মাসে মুনাফা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন আসল টাকাই ফেরত দিচ্ছে না। পরে দেখি অফিসই বন্ধ।”
মধুপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “আমি ৩১ লাখ টাকা জমা রেখেছি। টাকা চাইলে বারবার ঘোরানো হতো। হঠাৎ একদিন গিয়ে দেখি কেউ নেই, অফিসে তালা ঝুলছে।”
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই প্রতারণায় জড়িত ছিলেন বাবলা পাড়ার আল-আমীন, মান্নান, জাহাঙ্গীর হোসেন, মালেক, হাসান ও মিজান—যারা নিয়মিত অফিস চালাতেন এবং নিজেকে পরিচালক পরিচয় দিতেন।
তারা অভিযোগ করেন, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে এই প্রতারণা ঠেকানো সম্ভব হতো। তার উদাসীনতা এবং নিয়মিত অডিট না করার কারণেই এ ধরনের প্রতারণা সংগঠিত হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন জানান, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে প্রতারিত গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সঞ্চিত অর্থ ফেরতের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামাঞ্চলে এনজিও বা সমবায় সমিতির নামে প্রতারণা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। অর্থনৈতিক সচেতনতার অভাব এবং যথাযথ সরকারি নজরদারির অভাবে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রতারিত হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরতের জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আরও পড়ুন:








