সোমবার

২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৭ পৌষ, ১৪৩২

সম্পত্তি লিখে নিয়েই ছেলেদের নির্যাতন, টয়লেটঘেঁষা অন্ধকার ঘরে ঠাঁই বৃদ্ধ মা-বাবার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩ জুলাই, ২০২৫ ১১:৫২

শেয়ার

সম্পত্তি লিখে নিয়েই ছেলেদের নির্যাতন, টয়লেটঘেঁষা অন্ধকার ঘরে ঠাঁই বৃদ্ধ মা-বাবার

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় দুই ছেলের প্রতারণা, অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বৃদ্ধ বাবা সানোয়ার হোসেন (৬৫) ও তার স্ত্রী মতিজান নেছা। ছেলেরা কৌশলে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি লিখে নিয়েছে। এখন তাদের বসবাস বিদ্যুৎবিহীন, টয়লেটঘেঁষা একটি ছোট ঘরে; যেখানে চলাচলের জন্য সঠিক পথটুকুও রাখা হয়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজিব সরকার রাজু জানান, ওই বৃদ্ধ দম্পতির ঘরে গত ছয় বছর ধরে বিদ্যুৎ নেই। গরমে তারা ঘরে থাকতে পারেন না। সামনে ছোট ছেলে মানিক হোসেন বাথরুম নির্মাণ করায় দুর্গন্ধে অবস্থান করাও কষ্টকর। এমনকি চলাচলের পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর গ্রামের ২০-২৫ জন স্থানীয় ব্যক্তি দুই ছেলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিল। কিন্তু তারা সবাইকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে আমি নিজেই গিয়ে দুই ছেলের বউকে বিষয়টি জানাতে বলি, কিন্তু তারা আর যোগাযোগ করেনি।

বড় ছেলে মোক্তার হোসেনকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি আমার বাবা-মা সম্পর্কে কথা বলেন, তাহলে আমি কিছু বলতে চাই না। আপনারা যা পারেন, তাই করেন।’ কথাগুলো তিনি লাউডস্পিকারে প্রায় ২৫ জন লোকের সামনে বলেন বলে জানান ইউপি সদস্য রাজু।

তিনি ধারণা করছেন, প্রায় সাত-আট বছর আগে বয়স্ক ভাতা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছেলেরা পাঁচ বিঘা জমি নিজেদের নামে লিখিয়ে নেয়। তখন সানোয়ার হোসেন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছয় বছর আগে বাড়ি ফিরে তিনি জানতে পারেন, তার নামে আর কোনো জমি নেই।

এর আগে গত ২ জুলাই সানোয়ার হোসেন তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, দুই ছেলে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পত্তি লিখে নিয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে ভরণপোষণ দিচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি ও তার স্ত্রী শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে চরম দুর্ভোগে আছেন।

বড় ছেলে মোক্তার হোসেনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে মেম্বারের কাছে গিয়েছিলাম। আজ বসে সমাধান করব।’

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বৃদ্ধ দম্পতিকে সহায়তা করার বিষয়েও চিন্তা ভাবনা চলছে।’



banner close
banner close