সোমবার

২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৭ পৌষ, ১৪৩২

ফেসবুকেই ভরসা: বাবা-মা থাকলেও সমাজের সহায়তায় রাজকীয় বিয়ে উর্মির

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২ জুলাই, ২০২৫ ০৮:১০

আপডেট: ২ জুলাই, ২০২৫ ০৮:১৫

শেয়ার

ফেসবুকেই ভরসা: বাবা-মা থাকলেও সমাজের সহায়তায় রাজকীয় বিয়ে উর্মির
ছবি বাংলা এডিশন

বাবা-মা জীবিত থাকলেও বিচ্ছেদের পর উর্মি খাতুন হয়ে পড়েন কার্যত ‘এতিম’। বেড়ে ওঠা নানা-নানির অভাবী ঘরে। আর্থিক অনটনের কারণে বিয়ের আয়োজন যখন অনিশ্চিত, তখন ফেসবুকে সমাজকর্মীর একটি পোস্ট বদলে দিল তার জীবন। জনসাধারণের সহায়তায় আয়োজিত হয় একটি পূর্ণাঙ্গ ও সম্মানজনক বিয়ে।

বিয়ের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনটি হয় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা উর্মি খাতুনের (২০)। বর জামিল হোসেন, পাশের গ্রামের একজন তাঁতশ্রমিক। বিয়ের দিন ছিল মঙ্গলবার, ১ জুলাই।

উর্মির পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এরপর উভয়ে নতুন করে সংসার পেতেছেন। ছোট্ট উর্মিকে আশ্রয় দেন তার বৃদ্ধ নানা মো. আব্দুল কুদ্দুস ও নানী। অভাবের সংসারে নাতনির বিয়ের খরচ জোগাড়ে তারা পড়েন চরম সংকটে।

এই খবর জানতে পারেন স্থানীয় সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস। তিনি উর্মির অবস্থার কথা ফেসবুকে পোস্ট করলে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই এগিয়ে আসেন। পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৭ হাজার টাকা সহায়তা পাঠান।

এই অর্থেই আয়োজন করা হয় গায়েহলুদ, বউ সাজানো, বরযাত্রা, অতিথি আপ্যায়নসহ একটি পূর্ণাঙ্গ বিয়ের। কেনা হয় বিয়ের শাড়ি, হলুদের পোশাক, জুতা, কসমেটিকসসহ প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী। উপহার হিসেবে দেওয়া হয় আলমারি, সুকেস, লেপ-কম্বলসহ একটি নতুন সংসার গঠনের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।

বিয়ের অনুষ্ঠানে শতাধিক অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয় সবজি, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস ও দই দিয়ে। পুরো গ্রামজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।

কনে উর্মি খাতুন বলেন, “ছোটবেলা থেকেই নানা-নানির কাছে বড় হয়েছি। কখনো ভাবিনি এমন আয়োজনে বিয়ে হবে। যারা পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।”

বর জামিল হোসেন বলেন, “অসহায় এক মেয়েকে জীবনের সঙ্গী করতে পেরে আমি গর্বিত। সবার কাছে দোয়া চাই।”

উর্মির নানা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “রাজকীয় আয়োজনে নাতনির বিয়ে দিতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। সকলে ওদের দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া করবেন।”

সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, “ফেসবুকের মাধ্যমে উর্মির গল্প জানিয়ে সাহায্য চেয়েছিলাম। দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই সাহায্য করেছেন। আমরা চাই এমন অসহায় মেয়েদের পাশে আরও বেশি করে দাঁড়াক সমাজ।”

এদিনের বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে ছিলেন গ্রামবাসী ও আশপাশের অসহায় মানুষরাও। আনন্দঘন এই আয়োজনে অংশ নিতে নানা বয়সের মানুষ ভিড় করেন, ভালোবাসায় সিক্ত হয় উর্মির নতুন জীবন।



banner close
banner close