সোমবার

২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৭ পৌষ, ১৪৩২

৫ কোটি টাকার আরসিসি সড়ক সাগরে বিলীন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১ জুলাই, ২০২৫ ১৬:৪২

শেয়ার

৫ কোটি টাকার আরসিসি সড়ক সাগরে বিলীন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি
ছবি বাংলা এডিশন

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে সাগরের পানির ধাক্কায় ভেঙে যাওয়া প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন আরসিসি সড়কের তদন্ত প্রতিবেদন এক মাস পেরিয়ে গেলেও প্রকাশ পায়নি। অথচ ঘটনার দিনই সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম।

গত ২৯ মে রাতেই কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সমুদ্রের ঢেউয়ে অর্ধসমাপ্ত সড়কটির ধসে পড়া এবং নির্মাণের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষিতে এই কমিটি করা হয়। তবে ৩১ দিন পার হলেও সেই প্রতিবেদন এখনও জমা পড়েনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তদন্তে পৌর প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রক্রিয়া ধীরগতির হচ্ছে। কারণ তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসিন সাদেক। তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়েও তাই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

তদন্ত প্রধান ইয়াসিন সাদেক জানান, ঈদুল আযহার ছুটি থাকায় প্রতিবেদন দাখিলে বিলম্ব হয়েছে। আগামীকাল দ্বিতীয় দফায় তদন্ত কমিটির বৈঠক রয়েছে বলে তিনি জানান।

তবে তদন্ত প্রতিবেদন না থাকায় অপরিকল্পিত নির্মাণে দায়ীদের বিরুদ্ধে ইউএনও’র ঘোষিত ক্ষতিপূরণ আদায় ও জামানত বাজেয়াপ্তের উদ্যোগও থমকে আছে।

অভিযোগ রয়েছে, অপসারিত মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠদের হাতে প্রকল্পটির নিয়ন্ত্রণ ছিল। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান—মেসার্স আবরার এন্টারপ্রাইজ, এসএম ট্রেডার্স ও মোল্লা ট্রেডিং—মিলে ১ হাজার ৩০০ মিটার আরসিসি রাস্তার কাজ ভাগ করে নেয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২৪ মার্চ কার্যাদেশ পেলেও ২৩ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে কাজ শেষের শর্ত ছিল। তবে ভাঙনের সময় পর্যন্ত ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছিল, আর ততদিনে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিলও পরিশোধ করা হয়ে গেছে।

পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, বাস্তবে কাজ না করেই সিংহভাগ বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণে ছিলেন শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা।

তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে—নিম্নমানের লোকাল বালি ও পাতলা সিমেন্ট দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই কাজ শুরুর অভিযোগও উঠে এসেছে।

প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, পরবর্তীতে আরসিসি ঢালাই ও গাইডওয়াল নির্মাণ করে স্থায়িত্ব আনা হবে। কিন্তু মূল কাজই ধসে পড়ায় পুরো প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় নাগরিক সমাজ মনে করে, তদন্ত প্রতিবেদন বিলম্বিত করে প্রকল্প দুর্নীতির সত্যতা আড়াল করার চেষ্টা চলছে। তদন্তে গাফিলতি ও দোষীদের বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্নীতির ঝুঁকি রয়েছে বলেও তারা সতর্ক করেন। তারা নিরপেক্ষ ও উচ্চ পর্যায়ে পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কলাপাড়া ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, "তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই আইন অনুযায়ী যথা যথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"



banner close
banner close