লালমনিরহাটের গোশালা বাজারে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার (২২ জুন) বেলা ২টার দিকে হানিফ পাগলার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন স্থানীয় দুই নরসুন্দর (নাপিত) পরেশ চন্দ্র শীল (৬৯) ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযুক্ত পরেশ চন্দ্র শীল ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২০ জুন (শুক্রবার) তার দোকানে চুল কাটাতে গেলে ১৯ বছর বয়সী মো. নাজমুল ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে ইসলাম ধর্ম ও নবী করিম (সা.)-কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন পরেশ। তার বক্তব্যে নবী (সা.)-এর বিবাহ ও কাবা ঘর সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য উঠে আসে।
ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে রোববার বাজারে উত্তেজনা তৈরি হয়। স্থানীয় জনতা পরেশ ও তার ছেলের দোকান ঘেরাও করে, পরে দু’জনকেই আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মামলার দাবিতে শতাধিক মানুষ থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
সন্ধ্যার আগেই সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব নেয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় পরেশ ও বিষ্ণুর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার বাদী আব্দুল আজিজ বাংলা এডিশন-কে জানান, “মামলার পর থেকে আমাকে ও মামলার সাক্ষীদের বিভিন্ন দেশি-বিদেশি নাম্বার থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল ইসকনের সদস্য আমাদের ধারনা আমাদের ইসকনের সদস্যরা হুমকি দিচ্ছে। এবং যে নাম্বার গুলো থেকে হুমকি দিচ্ছে সে নাম্বার গুলো ভারতীয়।
জেলা ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তারেক বলেন, বাদী এবং যে ৬জন সাক্ষী আছে তাদের নাম্বার এজাহারের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখান থেকে নাম্বার গুলো ছড়িয়ে পড়েছে। যে-কারণে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নাম্বার থেকে তাদের-কে কল দিয়ে উঠিয়ে নেওয়া এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এখানে শুধু ইসকন নয় "র" এরও হাত রয়েছে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, হুমকির তালিকা থেকে বাদ যায়নি লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) নুরনবীও। তাকেও দেশি-বিদেশি নাম্বার থেকে কল দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শুধু ফোন করেই নয় ওয়াটসঅ্যাপেও বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে হুমকি। যার স্ক্রিনশট বাংলা এডিশনের সাংবাদিকের কাছে রয়েছে।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট:
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম ও মো. লিটন অভিযোগ করে বলেন, পরেশ চন্দ্র শীল দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামবিরোধী মনোভাব পোষণ করে আসছিলেন। তার দোকানে চুল কাটাতে যাওয়া অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তিনি ধর্মীয় আলোচনার নামে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে থাকেন, বিশেষ করে তরুণদের সঙ্গে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে ক্ষোভ থাকলেও সম্প্রতি মন্তব্যগুলো চরম মাত্রায় পৌঁছালে জনতা সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখায়। আর পরেশ চন্দ্রের মাথার পিছনে একটি টিকলি ছিল যা ৫ আগস্টের পর থেকে আর দেখিনি। যারা ইসকনের সদস্য তাদের মাথার পিছনে টিকলি থাকে। শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আমার ৬ বছরের শিশু মাজহারুল ইসলাম সাদমানও বেশ কয়েকদিন আগে চুল কাটতে গেলে তার কাছেও রাসূল (সাঃ) নামে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। এঘটনার পর আমার ছেলে আমাদের কে জানায়।
কথা হয় শিশু মাজহারুল ইসলাম সাদমান সঙ্গে তিনি বাংলা এডিশন-কে বলেন, আমি চুল কাটাতে গেছি। যাওয়ার পর ওই বয়স্ক লোকটা আমাকে বলে যে, তোমার নবী কে? আমি বলি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)। পরে আমাকে বলে, দেখো তোমার নবী কয়টা বিয়ে করেছে। আমি কিছু বলিনি পরে তিনি আবার বলে, তোমার নবী মাত্র ৬ বছরের একটি মেয়ে কে বিয়ে করেছে। এসব বলার পর আমি টাকা দিয়ে মন খারাপ করে ওখান থেকে চলে আসছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
১০ টাকা কান্ড, অপপ্রচারের অভিযোগ:
ঘটনার পরপরই এক ভিডিও বার্তায় পরেশ চন্দ্র শীলের পুত্রবধূ দাবি করেন, ১০ টাকা নিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়ার জেরেই এই ঘটনা সাজানো হয়েছে। তবে জনতা ও স্থানীয়দের দাবি, ঘটনাস্থলে পরেশ বা তার ছেলে এমন কোনো দাবির কথা প্রকাশ করেননি। এমনকি থানায় থাকা পুলিশ বা ওসি-ও জনতাকে আশ্বস্ত করার সময় এ ধরনের কোনো অভিযোগ বা বিকল্প ব্যাখ্যা দেননি।
এবিষয়ে নাজমুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে ধর্ম ও রসূল (সাঃ) কে নিয়ে বলেছে। এখানে টাকা পয়সার কোনো বিষয়ে কথা হয়নি। বিবিসি বাংলা-সহ যেসমস্ত গণমাধ্যমে ১০ টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পরে সময়ক্ষেপণ করে নতুন করে ‘১০ টাকার ঝামেলা’ তুলে ধরা মূলত একটি অপপ্রচার, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি ও শান্তিপূর্ণ আইনি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালানো হচ্ছে।
বাংলা এডিশন কথা বলেছে পরেশ চন্দ্র শীলের স্ত্রী গিতা রানি শীলের সঙ্গে। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে আপনাদের কে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এটি আসলে কতটুকু সত্যি? জবাবে গিতা রানি শীল বলেন, পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। একটু পর পর খোঁজ খবর নিচ্ছে। কেউ হুমকি ধামকি দেয়নি। কেউ ফোন করে গালিগালাজ বা অন্য কোনো করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, না না, কেউ এমন ফোন করে বলেনি।
প্রতিবাদ সমাবেশ ও শাস্তি দাবি:
এ ঘটনায় মুসল্লিরা মঙ্গলবার (২৪ জুন) শান্তিপূর্ণভাবে তাদের জোহরের নামাজের পর গোসালা বাজার এলাকায় একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করে। বিক্ষোভে বক্তারা পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলের শাস্তি দাবি করেন।
জেলার সুশীল সমাজ বলছে, “রাষ্ট্রীয় আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে-রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই যারা এই আইন লঙ্ঘন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
তবে এই মুহুর্তে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল কে জামিন দিলে ভারতীয় "র" তাদের-কে হত্যা করে মুসলমানের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে একটি ধর্মীয় দাঙ্গা লাগাতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা।"
আরও পড়ুন:








