মঙ্গলবার

১৭ জুন, ২০২৫
৩ আষাঢ়, ১৪৩২
২১ , ১৪৪৬

দম্ভ দেখিয়ে তদন্তেও অনুপস্থিত বাউফলের ইউএনও

মুনতাসির তাসরিপ

প্রকাশিত: ১৭ জুন, ২০২৫ ১০:৩৯

শেয়ার


দম্ভ দেখিয়ে তদন্তেও অনুপস্থিত বাউফলের ইউএনও

পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ‘ক্ষমতার দম্ভ’ ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে মালিককে শাস্তি দিতে পারি’ এমন মন্তব্যে উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। এই ঘটনায় তদন্তে নেমেছে প্রশাসন। তবে নির্দেশনা অমান্য করে তদন্তের সময় অনুপস্থিত অভিযুক্ত ইউএনও।

জানা গেছে, গত ১৯ মে, বাউফল আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে স্কুল পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। আয়োজক দুর্নীতি দমন কমিশনের পটুয়াখালী কার্যালয় ও স্থানীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে হাজির হন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষুব্ধ হন ইউএনও। প্রকাশ্যে তিনি কমিটির সভাপতি ও একাধিক আন্তর্জাতিক-জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক এএইচএম শহিদুল হককে হুমকি দিয়ে বলেন, "প্রজাতন্ত্রের আমি এমন এক কর্মচারী, মালিককেও শাস্তি দিতে পারি।" এসময় ঘটনার প্রতিবাদ করলে স্থানীয় সাংবাদিক বাবলুকে গ্রেফতারের নির্দেশও দেন ইউএনও, ওঠে এমন অভিযোগ। এ ঘটনায় দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়।

ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। পাল্টা অবস্থানে ইউএনওর পছন্দের কিছু রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক শিক্ষকদের একাংশ দিয়ে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধেই বিক্ষোভ করানো হয় সড়কে। এসময় সাবেক নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার ভাই ও নওমালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কে এম নাসির উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের পদধারী অনেক নেতা মিছিলে অংশ নেয় । পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা ইউএনওর বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। সবশেষ ইউএনওর অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ডাকা সংবাদ সম্মেলন সন্ত্রাসী হামলা ও ইউএনওর নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যদের বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। পরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা । ইউএনও'র অপসারণ চেয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার এ ঘটনার নিন্দা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র । পরবর্তীতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কাছে ইউএনও'র অপসারণ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে স্মারকলিপি দেয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির শিক্ষার্থীরা ।

এতে করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তদন্তের নির্দেশ দেয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মহসিন উদ্দীনকে। ১৬ জুন নির্ধারিত তদন্তের দিনে হাজির থাকতে বলা হয় দুই পক্ষকে। অন্যথায় একতরফা সিদ্ধান্ত জানানোর হবে বলে জানানো হয় নোটিশে। তবুও, ইউএনও উপস্থিত হননি।

ভুক্তভোগী এএইচএম শহিদুল হক বলেন, "আমরা তিন দিন অফিসে গিয়ে ইউএনওকে পাইনি। তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। যার কারণে তাকে জানানো সম্ভব হয়নি। তবে পরে তিনি কেন এমন আচরণ করলেন বিষয়টি আমার বুঝে আসেনা।"

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, "শুধু অপসারণ নয়। এ ধরনের আচরণের সুষ্ঠু বিচার না হলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে পুরো প্রশাসনই। তদন্ত শেষ হলেও, কী সিদ্ধান্ত আসবে অভিযুক্ত ইউএনও আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে? তা দেখার অপেক্ষায় বাউফলবাসী।"

তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মহসিন উদ্দীন ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে ইউএনও'র অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।

ইউএনওর সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্ষুদে বার্তা দেয়ার পর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

banner close
banner close