রবিবার

১৫ জুন, ২০২৫
৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
১৯ , ১৪৪৬

সিলেটে আর কোনো পাথর কোয়ারি খোলা হবে না : পরিবেশ উপদেষ্টা

সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪ জুন, ২০২৫ ১৬:৩৯

শেয়ার

সিলেটে আর কোনো পাথর কোয়ারি খোলা হবে না : পরিবেশ উপদেষ্টা
সিলেটের জাফলং পর্যটন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

পরিবেশবান্ধব পর্যটন বিকাশের জন্য সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি লিজ দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, সিলেটে আর কোনো পাথর কোয়ারি খুলে দিবে না সরকার। জাফলং পর্যটন কেন্দ্রকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এমনটি করা গেলে এ অঞ্চলের পাথর শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

শনিবার (১৪ জুন) দুপুর ১২টার দিকে জাফলং পর্যটন এলাকা পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটে নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে, এমন জায়গা থেকে আমরা আর পাথর উত্তোলনে অনুমতি দেব না। এই জায়গা (জাফলং) পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, যারা এখানে পাথর উত্তোলন করেন, পরিবেশবান্ধব পর্যটনের বিকাশের জন্য তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য আমরা পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।

তিনি বলেন, পাথর উত্তোলনের সঙ্গে নিশ্চয় কোনো একটা স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি বিষয় আছে। আমি এ এলাকায় ছোটবেলা থেকে আসি। কখনো পাথরের কারণে কোনো এলাকা প্লাবিত হয় না। এর উল্টোটাই ঘটে। বালু ও পাথর উত্তোলনের কারণে এমনভাবে নদীর পাড় ভেঙে গেছে নদীই গতি পরিবর্তন করে ফেলেছে। সিলেটে বন্যা কিন্তু পাথর জমা থাকার কারণে না বরং অতিরিক্ত পাথর তোলার কারণে। দয়া করে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য আর দিবেন না। বন্যা সিলেটের বাস্তবতায় সারা জীবনই পড়ে। কোনো দিন সিলেট বন্যা ছাড়া ছিল না। সিলেটের বন্যার সঙ্গে পাথর উত্তোলনকে কোনোভাবেই জড়িত করবেন না। জাফলং সারাজীবন যেমনটা ছিল এখনো তাই থাকবে।

এ সময় জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখন মুড়ির টিন বাসে করে জাফলংয়ে আসতাম। তখন এই জাফলংয়ে একটা নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছিল। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে জাফলং ও এর আশপাশের এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে। আপাতত এখান থেকে আর পাথর উত্তোলন হবে না এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানকার ক্রাশার মেইলগুলো সরাতে হবে এবং ওই ক্রাশার মেইলগুলোর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিকে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত অনেক শ্রমিক আছে। পাথর উত্তোলনে যে পরিমাণ লোকের কাজ হয় এর থেকে দুই-তিন গুণ এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট হবে যদি এটা পর্যটন নগরী হয়।

এর আগে, সিলেটের জাফলংয়ে এই দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে দিয়ে বিক্ষোভ করেন পাথর শ্রমিকরা। শনিবার (১৪ জুন) বেলা পৌনে ১২টার দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ইসিএ এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় ওই শ্রমিকদের রোষানলে পড়েন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাফলং পর্যটন স্পট ইসিএভুক্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন অন্তর্বর্তী সরকারের ওই দুই উপদেষ্টা। পরিদর্শন শেষে পৌনে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, পরিবেশ রক্ষায় জাফলং পাথর কোয়ারি বন্ধ ও পাথর ও বালু উত্তোলনের ফলে অনেক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপদেষ্টাদের এসব কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় পাথর শ্রমিক, জনতা ও পাথর উত্তোলনকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে বিক্ষোভ করে গাড়ি আটকে দেন। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে বিক্ষোভকারীদের রোষানলে আটকে ছিলেন তারা। এ সময় পুলিশ ও বিজিবি বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

banner close
banner close