রবিবার

১৫ জুন, ২০২৫
১ আষাঢ়, ১৪৩২
২০ , ১৪৪৬

টুটুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২ জুন, ২০২৫ ১৯:৫৮

শেয়ার

টুটুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়া সদরের মধুপুর পশুর হাটে আশরাফুল আলম টুটুল নামের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে (১২ জুন) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহতের ছেলে তানভীর।

এ ঘটনাই তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসা করে করা হয়। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার মধুপুর ইটভাটা পশু বাজারের পাশে টুটুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। টুটুল হোসেনকে হত্যার পর একটি মোটরসাইকেল ও একটি দেশীয় শটগান ফেলে পালিয়ে যায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করা ব্যক্তিরা। স্থানীয় বাসিন্দারা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার মৃত্যু। পরে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। ঘটনাস্থল এসে একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৫টি তাজা গুলি ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।

নিহত টুটুল (৫৭) কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা তুরাব হোসেনের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। গত কয়েকমাস আগে দেশে ফিরে স্থানীয় বাজারে মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন।

মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি জানিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, বুধবার রাতে টুটুলের ছেলে তানভীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় বিএনপি নেতা ইউনুসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ইউনুস স্থানীয় বিএনপির নেতা। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা মোটরসাইকেলের মালিক পাটিকাবাড়ির গ্রামের সোবাহান সহ মোট তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহতের দুলাভাই হেলাল মুন্সি ও মেয়ে টুম্পা বলেন, টুটুলের মেয়ের জামাই ভালো না। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। কয়েক মাস আগে টুটুল বিদেশ থেকে বাড়িতে আসে। এরপর জামাইকে তালাক দেয় মেয়ে টুম্পা। এরপর থেকেই জামাই ইমরান নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন। আজ রাত ৯টার দিকে টুটুল মধুপুর বাজারে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে জামাই ইমরান ও তার লোকজন টুটুলকে গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার ফাঁসি চাই।

নিহতের ভাই সাব্বির বলেন, সেদিন রাতে মধুপুর গরুর হাটে দুজন মিলে চা খাচ্ছিলেন টুটুল। এ সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মেয়ের জামাই ইমরান টুটুলের মুখে গুলি করেন। এ সময় তাকে একটি সিএনজিতে তুলে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই। পথে তার মৃত্যু হলে সিএনজি থেকে তার মরদেহ নামিয়ে রাস্তার পাশে রাখা হয়৷

সাব্বির আরও বলেন, ইমরান ও তার সঙ্গে আরও তিনজন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তারা দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিলেন। ইমরান নিজ হাতে তার শ্বশুর টুটুলের মুখে গুলি করে হত্যা করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাড়া দিলে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে দুজন পালিয়ে যান। এ সময় মোটরসাইকেল ও অস্ত্র ফেলে রেখে ইমরান ও আরেকজন পালিয়ে যান। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষোভ থেকে টুটুলের মেয়ের জামাই ইমরান স্থানীয় চরমপন্থী সংগঠনের সদস্যদের যোগসাজশে সাবেক শ্বশুর টুটুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেতে পারে। তবেএছাড়াও স্থানীয় মধুপুর কলার হাটের ইজারাসংক্রান্ত বিরোধের কারণেও টুটুল হোসেনকে খুন করা হতে পারে।

ওই সূত্রটি আরও জানান, সম্প্রতি দরপত্রে অংশ নিয়ে ওই হাটের ইজারা পান সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের বিএনপির কর্মী শরিফুল ইসলাম। তবে পরে ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের চরমপন্থী যোগাযোগ থাকা ইউনুস আলী চাপ প্রয়োগ করে শরিফুলের কাছ থেকে হাটের ইজারার স্বত্ব নিজের নামে লিখে নেন। এ ছাড়া হাট ইজারার দরপত্র কেনার অপরাধে শরিফুলের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ইউনুস। তবে হাটের ইজারা স্বত্ব ইউনুসের নামে লিখে দিলেও চাঁদার ১০ লাখ টাকা দিতে গড়িমসি করছিলেন শরিফুল। এ কারণে শরিফুলকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন ইউনুস। এদিকে চাঁদার ১০ লাখ টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইউনুস হোসেন। অন্যদিকে সাবেক শ্বশুরের ওপর প্রতিশোধ নিতে চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগ দেন ইমরান হোসেন।

স্থানীয়রা জানায়, গতকাল রাতে শরিফুল স্থানীয় বিএনপি নেতা ইউনুস হোসেনের অফিসে বসে ছিলেন। এই ইউনুস হোসেনের সঙ্গে সখ্য ছিল নিহত টুটুল হোসেনের। টুটুল বিএনপি নেতা ইউনুসের অনেকটা বডিগার্ড হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার সময় টুটুলও ওই অফিসে ছিলেন। সে সময় সেখানে হানা দেয় চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা। এ দলে চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা ইউনুস আলী ও ইমরান হোসেন ছিলেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে গুলিতে নিহত হন টুটুল হোসেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান আরও বলেন, টুটুল হত্যার ঘটনায় কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। টুটুলের মেয়ের সাথে তার জামাইয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ও হাটের ইজারার বিভিন্ন দিক মাথায় নিয়েই তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

banner close
banner close