
লক্ষ্মীপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় কাউছার আহমেদ মিলন নামে এক জামায়াত নেতা মারা গেছেন। শুক্রবার (৬ জুন) বিকেলে বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাজিবপুর এলাকায় নিহতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
নিহত কাউছার আহমেদ রাজিবপুর এলাকার মৃত মমিন উল্যার ছেলে ও বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন জামায়াতের ওলামা বিভাগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন।
এদিকে নিহতের পরিবার ও জামায়াত নেতাকর্মীরা কাউছারের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে দায়ী করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। তার জানাজায় জামায়াতের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে বিএনপির নেতারা। তবে বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে- স্থানীয় ঘটনা নিয়ে দুপক্ষের ঝামেলা হয়। ঘটনাটি রাজনৈতিক কোনো ইস্যু নয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন নুরনবীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় অংশ নেন বিএনপির জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান। জানাজা শেষে হামলাকারীরা বিএনপি নেতাকর্মী বলে আখ্যায়িত করে দলে তাদের রাখা নিয়ে প্রশ্ন করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তারা হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিলও করেন।
নিহতের স্বজনরা জানায়, বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে একই এলাকার রিয়াজ হোসেন বাবলু ও সোহাগদের সঙ্গে মারামারি হয় কাউছারের ভাই আলতাফ হোসেন আরজুর। ঘটনার সময় কাউছারসহ তার পরিবারের চারজন আহত হন। তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। এরপর বিকেলে কাউছার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। স্বজনদের দাবি, রিয়াজসহ অন্যদের মারধরের কারণে কাউছার মারা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, কাউছারের ভাতিজা দেড় মাস আগে এলাকায় একটি টিউবওয়েল চুরি করে। সে ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে টুকামিয়ার পুল এলাকায় রিয়াজ তাকে আটক করে। খবর পেয়ে তন্ময়ের বাবা আরজু ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সে সময়ের উভয়ের মধ্যে মারামারি হয়। পরে দুপুর ১২ টার দিকে বাড়ির সামনেই আরজুদের সঙ্গে রিয়াজদের মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে উভয়পক্ষ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। রিয়াজরা আহত হয়েছে বলে সদর থানা লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর কাউছার মারা যান।
অভিযুক্ত রিয়াজ বলেন, আরজুর ছেলে তন্ময় মসজিদের টিউবওয়েল চুরি করে পালিয়ে গিয়েছিল। তাকে আটক করলে আরজু আমাকে মারধর করে। এ ঘটনায় আরজুর সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছে। নিহত কাউছারের সঙ্গে আমাদের কোনো কিছুই হয়নি। সন্ধ্যায় তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে শুনেছি।
জামায়াত নেতা ড. রেজাউল করিম বলেন, কাউছার আহমেদ জামায়াতের একটি ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। তাকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। যারা হত্যা করেছে তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় হতে পারে না। তারা সন্ত্রাসী। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
বিএনপি নেতা হাসিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় ঝামেলা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। মারামারি হয়েছে সকালে, তিনি মারা গেছেন সন্ধ্যায়। আমরা শুনেছি এর আগেও তিনি দুবার স্ট্রোক করেছেন। এখনো স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। তবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেন, নিহতের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে কি কারণে তিনি মারা গেছেন তা বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, কাউছারের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: