মঙ্গলবার

২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৮ পৌষ, ১৪৩২

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্যা মাসুদ গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধ

প্রকাশিত: ২৭ মে, ২০২৫ ১৬:১৩

আপডেট: ২৭ মে, ২০২৫ ১৬:২৪

শেয়ার

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্যা মাসুদ গ্রেপ্তার
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্যা মাসুদ।

কুষ্টিয়া শহরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোর থেকে কালিশংকরপুর এলাকায় সোনার বাংলা মসজিদ সংলগ্ন একটি বাসায় সকাল ৮টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও অপরজন তার সহযোগী বলে জানিয়েছেন ওই ভবনের ভাড়াটিয়ারা।

কুষ্টিয়া শহরে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে এক সহযোগীসহ দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে আটক করেছে বলে শহরে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সেনাবাহিনী বা পুলিশের তরফ থেকে আটকের তথ্য এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

তবে দুপুর দুইটার দিকে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সাল মাহমুদ, কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ এ সময় তারা ওই ভুবনের ভাড়াটিয়া ও আশেপাশের স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন।

এবিষয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, আজ আমাদের কোনো অভিযান ছিল না। হয়তো অন্য কোনো বাহিনী করছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন সহ দুজনকে আটকের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি যে, কে বা কারা কাকে গ্রেপ্তার বা আটক করেছে। তবে খবর শুনে আমরা ঘটন স্থান পরিদর্শন করেছি। এখনই নিশ্চিত করে কোন কিছু বলতে পারছি না আমরা। তবে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।

কালীশংকরপুর এলাকার ওই বাসার ভাড়াটিয়া শাহীন, সানজিদুর, ইভান বলেন, তিন তলা বিশিষ্ট এই ভবনের নিচ ফাঁকা ছিল। প্রায় দেড় মাস আগে আমাদের এই বিল্ডিংয়ের পিছনের বাসার মালিকের ছেলে বাসাটি ভাড়া নিয়ে তাদেরকে উঠান। যে দুজন এই বসাতে থাকত তারা খুব বেশি চলাফেরা করত না। তাদের সাথে আমাদের মেলামেশা ও পরিচয় ছিল না। তবে পাশের ভবনের মালিক তার আত্মীয় পরিচয় দিয়েছিলেন। এবং বলেছিলেন তারা ব্যবসা করবে এবং এখানে থাকবে। এরপর থেকেই তারা দুজন এখানে থাকতো।

আজকে কি ঘটনা ঘটেছিল এ প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ভোর পাঁচটা থেকে আটটা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর একটি টিম আসেন এবং অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। দরজা না খোলার কারণে দরজা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা পাশের ভবনের মালিকের ছেলের সাথেও কথা বলেছেন। তারমানে যে লোকটি বাসাটি ভাড়া নিয়ে দিয়েছিলেন তাদের সাথে কথা বলেন। আমরা জানতে পেরেছি যে, যাদেরকে আটক করা হয়েছে সে সুব্রত বাইন এবং তার সহযোগী৷ সুব্রত বাহিনীর চেহারার সাথে মিলও খুঁজে পেয়েছি আমরা। অভিধানে অংশ নেওয়া কয়েকজন আমাদেরকে সুব্রত বাইনের নামও বলেছিলেন।

ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মঙ্গলবার ভোরে তিন ঘণ্টা ধরে সেখানে অভিযান চালিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতে মেস ভাড়া দেওয়া হয়। যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটির সামনে পৌরসভার সাইনবোর্ডে বাড়ির মালিকের নাম লেখা মীর মহিউদ্দিন। তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার মেসে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১৮ জন ছাত্র থাকেন।

কালীশংকরপুর এলাকার ওই বাসার ভাড়াটিয়া শাহীন বলেন, নিচতলায় এই বাড়ির পেছনের বাড়ির এক স্থানীয় বাসিন্দা দুই মাস আগে ভাড়া নেন। দেড় মাস আগে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এ বাসায় তাদের উঠান। নিচতলায় কী হয় বা কারা থাকেন, তা কখনো দেখেননি আমরা। তবে একজনকে কয়েকিদিন দেখেছি যে কাপড় রোদে দিচ্ছে এবং বাইরে থেকে খাওয়ার আনছেন। কাজের সাথে সুব্রত বাহিনীর চেহারার মিল রয়েছে। অভিযানে অংশ নেওয়া কয়েকজন বলেছেন যে তিনি সুব্রত বাইন।

স্থানীয়রা ও ভাড়াটিয়ারা জানান, আজ ভোর পাঁচটার কিছু সময় পর বাড়ির সামনে সেনাবাহিনীর ৫ থেকে ৬টি গাড়ি আসে। গাড়ির বহরে একটি কালো মাইক্রোবাসও ছিল। প্রায় ৫০ জন সেনাসদস্য বাড়ির তালা খুলতে বলেন। তালা খোলার পর তারা দোতলা ও তিনতলায় ওঠেন। এরপর মেসের সব বাসিন্দাকে একটি কক্ষে রাখেন। এসময় তারা মেসের ছাত্রদের বলেন, ‘তোমাদের কোনো ভয় বা সমস্যা নেই। তোমরা বসে থাকো। এখানে অভিযান চলছে।’ সেনা কর্মকর্তা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন বলে ছাত্ররা জানান।


মেসের শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে নিচতলায় তল্লাশি চলে। আটটার কিছু সময় পর কালো মাইক্রোবাসটি একদম গেটের সামনে চলে আসে। নিচতলা থেকে দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে হাতকড়া পরা ও মাথায় গামছা বাধা অবস্থায় গাড়িতে তোলা হয়। আরেক যুবকের কোমরে ও শরীরে দড়ি দিয়ে বাধা ছিল।

ছাত্রদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেসের পেছনের বাড়িতে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকানো পাওয়া যায়। একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া মিলেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ও ওমর বলেন, সকালে তারা দেখতে পান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি। দুই ব্যক্তিকে আটক করে গাড়িতে করে চলে যায়। সেনাবাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি ছিল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে সুব্রত বাইন প্রকাশ্যে অপরাধে যুক্ত হন এবং আলোচনায় আসেন। আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন প্রকাশ্যে আসেন।

সুব্রত বাইন বাংলাদেশের একজন কুখ্যাত অপরাধচক্র নেতা। তাকে সচরাচর 'শীর্ষ সন্ত্রাসী' হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় কমপক্ষে ৩০টি খুনের মামলা রয়েছে। ২০০৩ পর্যন্ত সুব্রত বাইন ছিল ঢাকার অপরাধ জগতের প্রভাবশালী চক্র সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদকে হত্যার মধ্য দিয়ে নামকরা সন্ত্রাসী হিসাবে সুব্রত বাইনের অভিষেক হয়। সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী।

২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, সুব্রত বাইন তাদের অন্যতম। পুলিশের হাতে আটক হওয়া এড়াতে সে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। ভারতে সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সে পশিচমবঙ্গে ব্যবসা গড়ে তোলে। জমি কেনে এবং বাড়ী তৈরী করে।



banner close
banner close