মঙ্গলবার

২০ মে, ২০২৫
৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
২২ জিলক্বদ, ১৪৪৬

টেকনাফে ইয়াবা কারবারিদের স্বার্থরক্ষায় মানববন্ধন 

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০ মে, ২০২৫ ১২:০৮

শেয়ার

টেকনাফে ইয়াবা কারবারিদের স্বার্থরক্ষায় মানববন্ধন 
ছবি: মানববন্ধন।

টেকনাফে এক চাঞ্চল্যকর ও নিন্দনীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছে কথিত এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটি মানববন্ধন। সম্প্রতি সীমান্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত ও বহু আগে থেকেই মাদকপাচার ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হিসেবে আলোচিত-সমালোচিত কক্সবাজারের টেকনাফে সাংবাদিকদের সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ফলেই কিছু চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি ও চোরা কারবারিদের নাম প্রকাশ্যে আসে। মাদক কারবারিদের বাধা হয়ে দাঁড়ায় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।  তাদের স্বার্থ রক্ষায় এবং সাংবাদিকের কণ্ঠ রোধ করতে কথিত বিএনপি নেতা ওসমান গনি ও ছাত্রদলনেতা ইবরাহীম, যারা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির ছত্রছায়ায় অপরাধীদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে আসছেন, তাদের নেতৃত্বেই ইয়াবা কারবারীদের এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। উক্ত মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখা যায় খারাংখালীর কুখ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ী আবু তালেব, যার বিরুদ্ধে মাদকের বড় চালান পাচারের অভিযোগ এসেছে। রয়েছে একাধিক মামলাও । একইভাবে মিনাবাজারের চিহ্নিত মাদক কারবারি মান্নান, যিনি মূলত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ইয়াবা পাচারের নিরাপদ রুট পরিচালনা করেন বলেও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তাকেও মানববন্ধনের সম্মুখ সারিতে দেখা যায়। আরও উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন ‘ব্যবসায়ী’ ও ‘সামাজিক ব্যক্তিত্ব’, যাদের প্রকৃত পরিচয় ইয়াবা ও চোরাচালান সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে স্থানীয় জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই চিহ্নিত করে আসছে।

এই মানববন্ধনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত ও সংগঠিত প্রচেষ্টা—একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে হয়রানি করার জন্য। সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা, যেখানে সত্য প্রকাশ করাটাই প্রধান দায়িত্ব। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা টেকনাফে যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ব্যবসা চলে, যেখানে স্থানীয় কিছু রাজনীতিক, প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব ও প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী একটি অশুভ চক্র গঠন করে এলাকায় নৈরাজ্য ও ভয়াবহ সামাজিক ক্ষতি সাধন করছে, সেখানে নির্ভীক সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি সাহসী ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক দৈনিক যুগান্তর এর ভ্রাম্রমান প্রতিনিধি ইয়াবা কারবারি সিন্ডিকেটের নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনে মাদক কারবারি মান্নানসহ টেকনাফের কিছু প্রভাবশালী চোরাকারবারি ও তাদের রাজনৈতিক মদদ দাতাদের কার্যক্রমের বিস্তারিত চিত্র উঠে আসে, যা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তোলে এবং প্রশাসনিক মহলেও চাপে পড়ে তারা।

এই অবস্থায়, স্বভাবতই মাদক ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ তাদের নাম সরাসরি সংবাদে আসায় প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়ে এবং সাধারণ মানুষের নজর তাদের দিকে আরও ঘনীভূত হয়। তাই চক্রান্তের মাধ্যমে তারা জনমত বিপরীতমুখী করতে এবং সাংবাদিকের সামাজিক অবস্থান নষ্ট করতে কথিত রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে মানববন্ধনের আয়োজন করে। তারা সেখানে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগ তোলে এবং অপপ্রচার চালায় যে,উক্ত সাংবাদিক ‘চাঁদাবাজি’, ‘দলীয় পক্ষপাত’, এমনকি ‘প্রশাসনকে ভুল তথ্য দেওয়া’র মতো অভিযোগে লিপ্ত। কিন্তু মানববন্ধনের ভিডিও ফুটেজ, ছবিসহ নানা প্রমাণে দেখা যায় যে, অংশগ্রহণকারীরা মূলত ইয়াবা সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য, যাদের কারো কারো বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট রয়েছে।

এই ঘটনা শুধু একটি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয়, বরং সাংবাদিকতা পেশার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ আঘাত। প্রশ্ন উঠেছে, কে এই কথিত বিএনপি নেতা? স্থানীয় সূত্র বলছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির আড়ালে একটি গোপন অপরাধ জগত পরিচালনা করছেন। নির্বাচনের সময় দলীয় পরিচয় দিয়ে নিজেকে পরিচিত করালেও বাস্তবে তিনি সব সরকারের আমলে টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাধর মহলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। সে জামায়াত থেকে বিতাড়িত হয়ে কৌশলে বিএনপির ছত্রছায়ায় ঢুকেছে। এই ব্যক্তি মাদক সিন্ডিকেটের রাজনৈতিক মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন এবং বারবার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে । তার হাত ধরেই মাদক ব্যবসায়ীদের বৈধ ব্যবসায়ী ও সামাজিক নেতা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, যার সাম্প্রতিক উদাহরণই হলো এই মানববন্ধন।

আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, মানববন্ধনের আগে-পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সংগঠিত প্রচার চালানো হয়, যেখানে ইয়াবা কারবারিদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় কিছু তথাকথিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং মাদক সিন্ডিকেটের ভাড়া করা লোকজন অংশগ্রহণ করে। উদ্দেশ্য ছিল—সাংবাদিকদের মনোবল ভেঙে দেওয়া, প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করা, এবং এলাকাবাসীর কাছে মাদক কারবারিদের ‘ভিকটিম’ হিসেবে তুলে ধরা। অথচ বাস্তবতা হলো, সাংবাদিকরা তাদের সাহসী অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইয়াবা কারবারিদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। এই কারবারিরা একদিকে যেমন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ যেমন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (ARSA) ও আরাকান আর্মির সঙ্গে মিলে আন্তর্জাতিক মাদকপথ পরিচালনা করছে, অন্যদিকে তারা স্থানীয় যুবসমাজকে ধ্বংস করছে।

এই পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে উঠেছে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ। টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তাদের মাদক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তদন্ত চালানো। সেইসঙ্গে, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে তারা ভয় বা চাপে না পড়ে তাদের দায়িত্ব পালনে পিছিয়ে না যান। দেশের নিরাপত্তা, যুবসমাজ রক্ষা এবং সামাজিক নৈতিকতার স্বার্থে সাংবাদিকতা একটি অপরিহার্য অস্ত্র। মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে এটি যেন বন্দী না হয়, সে দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি প্রশাসনের ।

কথিত রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে মাদক ব্যবসায়ীদের এ মানববন্ধন শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি গভীর ও ভয়ানক চক্রান্ত—যার লক্ষ্য সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ, জনগণের চোখে ধুলা দেওয়া এবং টেকনাফের মাদক সাম্রাজ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামোকে আবারও শক্ত ভিত্তি দেওয়া। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে হলে প্রশাসন, সচেতন নাগরিক, এবং প্রকৃত রাজনীতিকদের একত্রে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ‘সত্য প্রকাশই শক্তি’—এই নীতিতে বিশ্বাস রেখে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

এদিকে টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়দানকারী ওসমান বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মিছিলে ছিল,কিন্তু ওরা মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে।  সাংবাদিক আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে, তাই এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে,।  আমি উপজেলা বিএনপির কমিটিতে আছি। আপনাকে কোন পেপারস দিতে পারবনা।  আপনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সভাপতির সাথে কথা বলেন। আমি কোন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করিনি। আপনি যাচাই করতে পারেন। আমি কোন ইয়াবা ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করিনা, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।  আমি সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান, কোন কাগজ আপনাকে দিতে পারবনা।

 

banner close
banner close