
ছবি : বাংলা এডিশন
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের নতুন কমিটি গঠনে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক তালুকদারকে এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ২১ সদস্যের অনুমোদিত কমিটির মধ্যে ১৮ জনই আওয়ামী লীগ ঘরানার।
সূত্র জানায়, গত ২৪ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্যাডে এই কমিটির অনুমোদন দেন জেলা শাখার আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আজিজুর রহমান দুলাল। কমিটিতে এনামুল হক তালুকদারকে সভাপতি ও বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গফুর সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এ ছাড়া সাবেক বন কর্মকর্তা আলী কবির হায়দারসহ অধিকাংশ সদস্যই আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় সূত্র বলছে, গত ১৬ বছর ধরে এরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নানা সুবিধা ভোগ করেছেন। অনেকেই জানতেনও না যে, তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ভদ্রঘাট ইউনিয়নের ঝাটিবেলাই গ্রামের এনামুল হক তালুকদার দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সর্বশেষ সহসভাপতির পদে রয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এনামুল হকের ছোট ভাই এমদাদুল হক রঞ্জুকে করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা দলের অর্থ সম্পাদক; তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর সরকার নিজেও স্বীকার করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি জানান, সভাপতি বর্তমানে পঞ্চগড়ে ঠিকাদারি কাজে রয়েছেন। ফিরে আসার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
এদিকে কমিটির সহসভাপতি আলী কবির হায়দার বলেন, “আমি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নই। তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক আমার লেখা একাধিক বই রয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিই।”
তবে কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করেছেন, তাদের না জানিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেউ কেউ লিখিতভাবে তাদের নাম প্রত্যাহারের অনুরোধও জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাতে রাব্বী উথান বলেন, “এই কমিটিতে মাত্র তিনজন বিএনপি সমর্থক রয়েছেন, বাকিরা আওয়ামী লীগ ঘরানার। আমরা জেলা আহ্বায়কের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি প্রথমে কিছু জানেন না বললেও পরে কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিগোচর করেছি।”
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান ফেরদৌস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাদের দিয়েই যদি মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি গঠিত হয়, তাহলে বিএনপির আন্দোলন ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মূল্য কোথায়?”
কমিটির বিতর্কিত গঠনতন্ত্র নিয়ে প্রশ্নের মুখে জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান দুলাল বলেন, “কমিটি অনুমোদনের পরই জানতে পারি, এর অধিকাংশ সদস্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। অনুমোদিত কমিটি সহজে বাতিল করা সম্ভব নয়। তবে আপাতত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: