ছবি : বাংলা এডিশন
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রী কলেজের অফিস কক্ষের তালা ভেঙে ভাংচুর, লুটপাট ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান ও তার ছোটভাই ইউনুস আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকার নিজ বাসা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে দৌলতপুর থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা।
গ্রেপ্তার আব্দুল মান্নান (৫৮) ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার মৃত ইসমাইল সরদারের ছেলে৷ গ্রেপ্তার অপর আসামী ইউনুস আলী (৪০) আব্দুল মান্নানের ছোটভাই। আব্দুল মান্নান নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। এ মামলার পলাতক আসামি মেহেদী (৩৩) ফিলিপনগর গ্রামের একরেজ প্রামানিকের ছেলে।
এর আগে ১৪ মে সকাল ১০টার দিকে ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রী কলেজে অস্ত্রসস্ত্রসহ মান্নান ও তার লোকজন প্রবেশ করেন। এসময় কলেজের অফিসকক্ষের তালা ভেঙে ভাংচুর, ল্যাপটপ ও টাকা লুটপাট করে। আসামিরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান মাসুমকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় গত শুক্রবার ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান মাসুম বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় তিনজনের নামোল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বাদী ও ভুক্তভোগী রেজাউর রহমান মাসুম (৪৫) ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি দৌলতপুর উপজেলার হিসনাপাড়া এলাকার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে। মাসুম বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর আব্দুল মান্নান ও তার লোকজন অস্ত্রসস্ত্রসহ কলেজে প্রবেশ করে এবং অফিস কক্ষের তালা ভেঙে ল্যাপটপ নথিপত্র ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এসময় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। আব্দুল মান্নান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
মামলার বাদী রেজাউর রহমান মাসুম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আব্দুল মান্নান ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ছিল। সে জেলা কৃষকলীগের সহ সভাপতি ও আওয়ামলীগের সক্রীয় কর্মি। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যার পৃষ্টপোষক হাসিনা সরকারের পতনের পর সে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় লোকজনদের তোপের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে এলাকাবাসী, শিক্ষক কর্মচারি ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আমাকে (বাদী মাসুমকে) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দ্বায়িত্বভার অর্পণ করেন। আমি কলেজের দ্বায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে আসামী আব্দুল মান্নান বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং আমাকে খুন জখম করার উপযুক্ত সুযোগ খুঁজতে থাকে। আসামী আমাকে হুমকি ধামকি দেওয়ায় ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করি।
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, গত ১৪ মে সকাল অনুমান ১০ ঘটিকার সময় আমি নিজ বাড়ী হইতে মোটরসাইকেল যোগে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে দৌলতপুর থানাধীন ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রী কলেজে ভিতর প্রবেশ করলে মান্নান সহ ৭/৮ জন আসামী পরষ্পর যোগসাজশ করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হাতে অগ্নেয়াস্ত্র সহ দেশীয় তৈরী ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বেআইনীভাবে আমার মোটরসাইকেল গতিরোধ করে। আসামী আব্দুল মান্নানের হুকুমে সকল আসামীরা আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সন্ত্রাসী কায়দায় কলেজের একটি শ্রেণী কক্ষে আমাকে অবৈধভাবে আটক রাখে। পরে সকল আসামীরা আমার অফিস কক্ষের তালা ভাঙ্গিয়া আমার ব্যক্তিগত একটি ল্যাপটপ, টেবিলের ড্রয়ারে রক্ষিত নগদ ৪৭ হাজার ৫০০টাকা, রেজুলেশন বহি, শিক্ষক/শিক্ষিকা হাজিরা বহি, গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রী কলেজে ভাংচুর, নথিপত্র লুট এবং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হত্যার হুমকির অভিযোগে আব্দুল মান্নান সহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার সকালে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন:








