
ছবি : বাংলা এডিশন
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি, সোনাতনী ও গালা—এই তিনটি ইউনিয়নের নয়টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন জনজীবনে চরম দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। মাকড়া, ধীতপুর, কুড়সি, বারপাখিয়া, বড় চামতারা, বানতিয়ার, চর ঠুটিয়া, বৃ-হাতকোড়া ও মোহনপুর—এই গ্রামগুলোর মানুষ ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের শুরু থেকেই যমুনার ভাঙন নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যেখানে এক মাস আগেও মানুষের ঘরবাড়ি ছিল, এখন সেখানে অথই পানি। বিশেষ করে সোনাতনী ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষিজমিতে প্রচুর পরিমাণে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাসকালাই, বাঙ্গি, সবজি, ধনিয়া উৎপাদন করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল এই অঞ্চল। অনেক কৃষক ষাঁড় গরু পালন করে বাড়তি আয় করতেন। কিন্তু যমুনার ভাঙনে এই স্বপ্ন আজ নদীতে বিলীন।
ধীতপুর গ্রামের ৭০ বছরের প্রবীণ কৃষক কালু মোল্লা বলেন, “১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। ফসলি জমি আর ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। এটাও যদি নদী কেড়ে নেয়, কোথায় গিয়ে থাকব, কী খাব—সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না।”
মনোয়ারা বেগম (৬৫) জানান, তার বাড়ি ও জমি ১৪ বার যমুনায় বিলীন হয়েছে। এবারও তিনি ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
সোনাতনীর কৃষাণী রজিনা খাতুন বলেন, “এই এলাকার বালুমাটি সোনার মত ছিল। যা বুনেছি, তা-ই ফলেছে। সংসার ভালোই চলছিল। এখন সব নদীতে চলে যাচ্ছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, গত এক বছরে শ্রীপুর থেকে বারপাখিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩-৪ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। “দ্রুত বাঁধ নির্মাণ না হলে পুরো এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”
ফজর আলী ব্যাপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “চ্যাংরা থেকে বুড়া হয়ে গেলাম, কিন্তু কোনো সরকারই ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।”
কুরসি গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলাম জানান, “গরুর হাট, মসজিদ, মাদ্রাসা—সবকিছু নদীতে চলে যাচ্ছে। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো ইউনিয়ন বিলীন হয়ে যাবে।”
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ বলেন, “গত ছয় বছরে যমুনার ভাঙনে তিনটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২৮০ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তবে একই সময়ে ৯০ হেক্টরের বেশি জমি জেগেছে। জমির পরিমাণ একই থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন।”
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, “ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত বালুর বস্তা ফেলার জন্য বলা হয়েছে।”
এলাকাবাসীর জোর দাবি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করে এই ভাঙন ঠেকানো হোক, না হলে হাজারো মানুষের জীবিকা ও আবাসন চিরতরে হারিয়ে যাবে যমুনার গর্ভে।
আরও পড়ুন: