
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা ও বয়ড়া ইউনিয়নের পশ্চিম খলিলপুর ও যাত্রাপুর এলাকায় ইছামতী নদীর ওপর সংযোগ সড়ক বিহীন কাঠের সেতু নির্মাণে জনগণের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একপাশে সরকারী রাস্তার সাথে সংযুক্ত থাকলেও অপর পাশে ব্যক্তিমালিকা জায়গা থাকায় হয়নি সংযোগ সড়ক। ফলে এই সেতু দিয়ে কোনো প্রকার যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল আনা নেয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বলে দাবি করেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০০৯ সালের দিকে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সিমেন্টের খুঁটির ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে প্রাথমিকভাবে একটি সাঁকো তৈরি করে উপজেলা পরিষদ। কিন্তু দুই বছর পরেই কাঠের পাটাতনগুলো নষ্ট হয়ে গেলে এলাকার মানুষের চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
এরপর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে সিমেন্টের খুঁটির ওপর বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে দেয়া হয়। সেই বাঁশের সেতু ভেঙ্গে গেলে দুই বছর আগে আবার কাঠের সেতু তৈরি করে দেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান। তাতে সেতুর একপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় এলাকাবাসীর বড় সমস্যায় পরতে হয় । এই সেতু দিয়ে পায়ে চলাচল করা গেলেও কোনো যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। ফলে কোনো মালামালও আনা নেয়া করতে পারছেন না স্থানীয়রা।
একাধিক এলাকাবাসী জানান, ইছামতী নদীর উত্তর পাড়ে পশ্চিম খলিলপুর, আগ্রাইল, সট্টি, পশ্চিম চালা, লাউতা, সুলতানপুর, খাবাশপুর ও দড়িকান্দিসহ আটটি গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। নদীর দক্ষিণ পাড়ে বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, যাত্রাপুর বাজার, যাত্রাপুর খেলার মাঠ, সরকারি বিচারপতি নুরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হরিরামপুর থানাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উত্তর পাড়ের আটটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন চলাচল করতে হয় এই সেতু দিয়ে। পায়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও এই এলাকার কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল আনা নেয়ার কোনো উপায় নেই।
প্রায় তিন-চার মাইল ঘুরে লেছড়াগঞ্জ বাজারে কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল আনা নেয়া করতে হয়। এতে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ নিয়েও বিপাকে রয়েছেন হাজার হাজার কৃষকরা।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারী রাস্তার শেষ সীমানায় সেতু নির্মাণ না করে পাশেই ব্যক্তি মালিকাধানী জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হয়। ওই ব্যক্তিমালিকাধীন জায়গাটি ভরাট করে বেড়া দিয়ে আটকে তারা ফলজ করেছে। বেড়া দিয়ে রাস্তা আটকে দেয়ায় যাতায়াতে বিপাকে পড়েন এলাকাবাসী। পরে নদীর পাড় ঘেঁষে সরু রাস্তা নির্মাণ করে কোনো রকমে চলা ফেরা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় পশ্চিম খলিলপুর এলাকার বাসিন্দা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাসির উদ্দিন জানান, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যে সেতুটির একপাশে রয়েছে ব্যক্তিমালিকাধীন জায়গা। তাদের জায়গা তারা বেড়া কাজে লাগিয়েছে। এখন জনগণ তো চলাফেরা করতে পারে না। পরে সেতুর গোড়া দিয়ে নদীর পাড় ঘেঁষে সরু রাস্তা তৈরি করে কোনো রকমে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করছে মানুষ।’
বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরিদুর রহমান জানান, ‘এই জায়গাটার সমস্যা দীর্ঘদিনের। তবে আমি যতদূর জানি একটা ব্রীজের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে প্রস্তাবনায় আছে। তবে এটা কোন প্রক্রিয়ায় রয়েছে তা জানিনা।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার জানান, ‘কাঠের সেতুর বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তবে এটা অনেক বড় ব্রীজ। যা আমাদের অধীনে সম্ভব নয়। তবে বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব এবং যত দ্রুত সম্ভব যেনো এই সমস্যাটা নিরসন হয় সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন: