বুধবার

১৪ মে, ২০২৫
৩১ বৈশাখ, ১৪৩২
১৬ জিলক্বদ, ১৪৪৬

চাকরির আশায় রাশিয়ায়, যুদ্ধের মাটিতে নিখোঁজ টাঙ্গাইলের নাজির

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪ মে, ২০২৫ ১২:৪৪

শেয়ার

চাকরির আশায় রাশিয়ায়, যুদ্ধের মাটিতে নিখোঁজ টাঙ্গাইলের নাজির
যুদ্ধের মাটিতে নিখোঁজ টাঙ্গাইলের নাজির।

জীবিকার সন্ধানে নাজির উদ্দিন পাড়ি জমিয়েছিলেন রাশিয়ায়। ঘরের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। দেশে রেখে গেছেন তিন বছরের কন্যা, অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা ও স্ত্রীকে। কিন্তু ভাগ্য তার জন্য অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশায় যাওয়া নাজির এখন নিখোঁজ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের মাটিতে হারিয়ে গেছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের কুরমুশি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের একমাত্র ছেলে নাজির (৩৭)। 

পরিবারের সদস্যরা বলেন, স্থানীয়ভাবে ব্যবসা করে সংসার চালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এরপর ঢাকার মিরপুরের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। চুক্তি হয় রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজের। পরিবার জমিজমা বন্ধক রেখে সংগ্রহ করে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা। সেই টাকা খরচ করে দুবাই হয়ে রাশিয়া পৌঁছান নাজির উদ্দিন।

রাশিয়ায় পৌঁছে কাজ নয়, নাজিরের ভাগ্যে জোটে যুদ্ধ। কয়েকদিন ক্যাম্পে থাকার পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় সামরিক প্রশিক্ষণ। ১৪ দিন পর পাঠানো হয় ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে। গত ১৬ এপ্রিল পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বাবা ও স্ত্রীকে জানান, তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে। এরপর থেকেই নিখোঁজ।

স্থানীয় সোহাগ, হোসেন ও রাকিবসহ অনেকে জানিয়েছেন, নাজির আমাদের এলাকার ছেলে। সে যেন কোনোভাবে ফিরে আসে, এই দাবি জানাই সরকারের কাছে।

স্ত্রী কুলসুম বেগম শোকে বাকরুদ্ধ। চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, আমার মেয়েটার বয়স মাত্র তিন বছর। প্রতিদিন বাবার জন্য মোবাইলের দিকে চেয়ে থাকে। আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন।

বৃদ্ধ বাবা ফয়েজ উদ্দিন বলেন, আমার ছেলেকে মিথ্যা চাকরির প্রলোভনে ফাঁদে ফেলে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে। ১২ লাখ টাকা সুদে এনে বিদেশে পাঠিয়েছি। আমি আমার ছেলে ফেরত চাই।

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নাজিরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

banner close
banner close