মঙ্গলবার

১৩ মে, ২০২৫
৩০ বৈশাখ, ১৪৩২
১৬ জিলক্বদ, ১৪৪৬

নেই গেটম্যান ও সিগন্যাল ব্যবস্থা এ যেন মরণফাঁদ 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ মে, ২০২৫ ১৪:৪৯

শেয়ার

নেই গেটম্যান ও সিগন্যাল ব্যবস্থা এ যেন মরণফাঁদ 
আন্তঃনগর ট্রেন পার হওয়ার অপেক্ষায় নিজ দায়িত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মোটরসাইকেল চালক। ছবি: বাংলা এডিশন

টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হাতিয়া রেলক্রসিংয়ে দেখা যায়, একটি আন্তঃনগর ট্রেন পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মোটরসাইকেল চালক। অরক্ষিত এ রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান বা নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

ছবিতে দেখা যায়, মোটরসাইকেল আরোহীটি ট্রেনটি পার হওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন। তার মুখে ছিল চিন্তার ছাপ, যেন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে জামালপুর রোডের টিপিবাড়ী এলাকাতেও, যেখানে একাধিক যানবাহন একইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে রেললাইন অতিক্রমের অপেক্ষায়।

টাঙ্গাইলের বিভিন্ন রেলক্রসিং এখন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। নেই গেটম্যান, নেই সিগন্যাল ব্যবস্থা- এসব অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারী ও যানবাহন চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জনবল সংকটের কথা বলে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করছে।

যমুনা পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন থেকে চন্দা পর্যন্ত ও ভূঞাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিকাংশ রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই। ট্রেনের হুইসেল বাজলেও গেট বন্ধ হয় না, সতর্কীকরণ সিগন্যাল নেই, এমনকি নেই স্বয়ংক্রিয় ব্যারিয়ার, সংকেত বাতি বা সতর্কীকরণ সাইরেন। কিছু রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পথচারী ও যানবাহন চালকদের জীবন নির্ভর করছে শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব সচেতনতার ওপর।

অপেক্ষারত মোটরসাইকেল চালক রশিদ শেখ বলেন, ট্রেনের আসার হুইসালে বুঝতে পারলাম ট্রেন আসতেছে। তাই নিজ দায়িত্ব ট্রেন যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেছি। এখানে কোন গেটম্যান, সিগন্যাল ব্যবস্থা নেই। অনেকবার অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। ট্রেন কখন আসে, বোঝার উপায় নেই। সঠিক ব্যবস্থা না নিলে আরও অনেক প্রাণহানি ঘটবে।

ফলদা গ্রামের মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিদিন আমরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি। এখানে ট্রেনের গতিবেগ অনেক বেশি, কিন্তু কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। গেটম্যান না থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল শেখ বলেন, আমরা প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে পথ চলি। গেটম্যান না থাকায় কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না।

টেপাকান্দির একাধিক বাসিন্দা জানান, এখানে মাঝেমধ্যে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে প্রাণহানি হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

অটোরিকশা চালক রুবেল মিয়া জানান, ট্রেন আসার সময় অনেকেই বুঝতে পারে না। যদি গেট থাকতো, তাহলে এত দুর্ঘটনা হতো না। গত কয়েক মাসে এইসব রেলক্রসিংয়ে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বাড়বে।

ইব্রাহিমাবাদ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শাহিন মিয়া বলেন, জনবল সংকটের কারণে প্রত্যেক রেল গেটে লোক দেওয়া যাচ্ছে না। তবে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

banner close
banner close