
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে ভুঁয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তার। আর এসব হাতুড়ে ডাক্তারের ভূতুড়ে চিকিৎসায় বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। ফলে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, এই অপচিকিৎসার বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
তথ্য মতে, কমপক্ষে এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি) বা বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ব্যতীত কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবি লিখতে পারবেন না। অথচ অনেকেই তাদের ব্যবহৃত প্রেসক্রিপশন প্যাডে নামের আগে ‘ডাক্তার’ ডিগ্রি লাগিয়ে রোগীদের জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া বাজারের মেইন রাস্তার পাশে মায়ের দোয়া চিকিৎসালয় নামে একটি চেম্বারের সামনে অনেক রোগী ভিড় করছেন। ভেতরে চেম্বারে রোগী দেখছেন ডা: মো: রবিউল ইসলাম । তাকে ডিএমএফ ডাক্তার বলে চিনেন অনেকেই। নিজের প্রেসক্রিপশন প্যাডে জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। প্যাডে লিখছেন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও। চেম্বারের সামনে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবস্থান ও দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া বাজারে মায়ের দোয়া চিকিৎসালয়ের রবিউল ইসলাম । তিনি তার নামের সঙ্গে ব্যবহার করেন (ডিএমএফ), ঢাকা।এল এম এ এফ জেনারেল ফিজিশিয়ান। এছাড়া তিনি একটি ফাউন্ডেশন থেকে নিয়েছেন ডিএমএফ ডিগ্রি। এ ডিগ্রি নিয়েই তিনি খুলেবসেছেন চেম্বার।
তাছাড়া তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটে ডিগ্রিধারী বলে জানা গেছে।
তিনি প্রতিদিন ৫০ জনেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা করেন। ৩ বছর ধরে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। তার ব্যবস্থাপত্র ও চেম্বারে লিখা বিএমডিসি ও এলএমএএফ রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ডি-৩০২২০৯,০৯৫২ লেখা রয়েছে। যা অন্যের বলে বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা।
এবিষয়ে রবিউল ইসলাম বলেন, অনেক পল্লী চিকিৎসক তাদের নামের আগে ডাক্তার লেখেন, তাই আমিও লিখছি। ডাক্তার লিখা আমার ভুল হয়েছে। এছাড়া তিনি এফ টি এফ থেকে ডিএমএফ সম্পুর্ন করেছেন বলে দাবী করেন।
বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন এর বিষয়ে জানালে তিনি দাবী করেন আপনারা ভুল ওয়েবসাইট সার্জ করেছেন।
স্থানীয় ছালাম জানান, ওই রবিউল ডাক্তার আবার এলাকায় বড় সাংবাদিক পরিচয় দেয়। সে তার অপকর্ম ঢাকার জন্য টাকা দিয়ে সংগ্রহ করেছেন একটি দৈনিকের আইডি কার্ড।
গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোনাব্বেরুল হক মোনা বলেন,যদি সে এরকম অন্যের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ব্যবহার করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: আনোয়ারুল হক বলেন, এমবিবিএস না হলে নামের আগে ডা. লেখা এবং রোগীকে ব্যবস্থাপত্র লেখার কোনো সুযোগ নেই। যেসব পল্লী চিকিৎসক নিজেদের ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ও অন্যের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ব্যবহার রোগীকে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: