
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকার একটি চরে ফেলে যাওয়া ৭৮ জন বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিককে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড উদ্ধার করেছে। এরপর তাদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রাত ১১টায় তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে শ্যামনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এবং বাকি তিনজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভারতীয় নাগরিককে শ্যামনগর থানায় রাখা হয়েছে। রাতেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা, শুকনো খাবার ও পানিসহ বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হয়।
আজ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার।
পুশ-ইন হওয়া কয়েকজন জানান, তারা ভারতের গুজরাট রাজ্যের সুরাট শহরের বস্তিতে বসবাস করতেন। ছোটখাটো কাজ করতেন তারা। ২৬ এপ্রিল ওই বস্তি ভেঙে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। সেদিন রাতেই তাদের আটক করা হয়। এরপর হাত ও চোখ বেঁধে পুলিশ ক্যাম্পে নেয়া হয়। সেখানে চারদিন আটক রাখার পর বিমানে করে কলকাতায় আনা হয়। সেখান থেকে জাহাজে করে ৯ মে বঙ্গোপসাগরের একটি চরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চোখ বেঁধে সেখানে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তারা পায়ে হেঁটে মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পে পৌঁছান।
বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় তাদের মোংলায় এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে নাম-পরিচয় যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করার পর রোববার রাতে শ্যামনগর থানায় পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ২৬ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তাদের ঠিকমতো খেতে দেয়া হতো না। মাঝে মধ্যে মারধর করা হতো। সবসময় গালিগালাজ করতো।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন জানান, তাদের বাবা-মা গুজরাটে থাকাকালে সেখানেই তাদের জন্ম হয়। তাই জন্ম সূত্রে তারা ভারতীয় নাগরিক। তাদের কাগজপত্র ছিল। ২০২৪ সালে তাদের সব কাগজপত্র ভারত সরকার নিয়ে নেয়।
বন বিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মশিউর রহমান জানান, ৭৮ জন বাংলাভাষী নাগরিককে ভারতীয় বাহিনী জাহাজ ও স্পিডবোটযোগে বঙ্গোপসাগরের একটি নির্জন চরে ফেলে দেয়। পরে তারা মান্দারবাড়িয়া টহল ফাঁড়িতে এসে আশ্রয় নেয়।
তিনি আরও জানান, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ। কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। একজনের হাত ভাঙা ছিল।
মান্দারবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির ওসি মোবারক হোসেন জানান, প্রথম দফায় ৩২ জন এবং পরবর্তী দুই দফায় আরও ৪৬ জন তার ফাঁড়িতে এসে আশ্রয় নেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনী খাতুন জানান, এমন আকস্মিক ঘটনায় সবাই বিস্মিত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে খাদ্য, পানীয় এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: